সেন্টমার্টিন নিয়ে মহাপরিকল্পনা : প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপনে উদ্যোগ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য মহাপরিকল্পনাও চূড়ান্তের পথে। মন্ত্রণালয় বলছে, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক [প্রকাশ : নয়াদিগন্ত, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫]

দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য মহাপরিকল্পনাও চূড়ান্তের পথে। মন্ত্রণালয় বলছে, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। একটি জলবায়ু প্রতিরোধী ও টেকসই বাংলাদেশ গড়াতে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বিগত এক বছরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কক্সবাজার ও সোনাদিয়ায় বিভিন্ন কাজে বরাদ্দকৃত ১০ হাজার ৩২২ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, দূষণ কমাতে ইতোমধ্যে সারা দেশের শপিংমলগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। পলিথিন উৎপাদন কারখানা, কাঁচাবাজার ও অন্যান্য স্থানে এর ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যৌথ অভিযান চলছে। পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুমণ্ডল’ এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ সিসা কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে তরুণদের যুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড় সংরক্ষণের জন্য গত এক বছরে ১৬টি জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইন ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নিয়মিত নজরদারি চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত হয়েছে। পূর্বাচলে ১৪৪ একর এলাকাকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত এক বছরে বেদখল হওয়া পাঁচ হাজার ৯৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে আবার বনায়ন করা হয়েছে।
গাজীপুরের গাছা খাল দূষণকারী ৯টি কারখানার সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সব পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের জন্য নতুন কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে এবং এর নিজস্ব ৩৭টি অফিস ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাতির চলাচলের পথ তৈরি এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য চুনতি ও শেরপুরের বন পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে।
জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার ও পিকনিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণ এবং নতুন আইন, বিধি ও নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজও চলছে। মন্ত্রণালয়ের এসব উদ্যোগ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এগুলো একটি জলবায়ু প্রতিরোধী ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর জানান, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। পরিবেশ, দ্বীপটির জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প আয়ের উপায় নির্ধারণের কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে। তার ভাষ্য, দ্বীপটির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য (দ্বীপের প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে আবার সুস্থ ও জীবন্ত করে তোলার লক্ষ্যে) সেখানে পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানব-হাতি সঙ্ঘাত কমাতে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)’ গঠন করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের সাথে বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে সুরক্ষিত করা হচ্ছে, জলাভূমিগুলোকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২৯৩টি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন অভিযানে পাঁচ হাজার ৬৮৪টি প্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে।