কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কেন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব দল প্রায় একমত যে, একজন প্রধানমন্ত্রী জীবনে ১০ বছরের বেশি ওই পদে থাকতে পারবেন না। তবে বিএনপি বিষয়টিকে শর্তযুক্ত করতে চায় যে, সেক্ষেত্রে সংবিধানে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি বলে সংবিধানে কিছু না রাখা। তাদের মতে, এটা রাখা হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পাবে। বিষয়টি আরো আলোচনার পর সবাই একটি পয়েন্টে একমত হতে পারবেন বলে আশা করা যায়। ড. মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব [প্রকাশ : নয়া দিগন্ত, ৪ জুলাই ২০২৫]

সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কেন

(প্রথম কিস্তি)

 
 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধান কার্যকর হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের জন্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ গঠন করা হয়। তারা সংবিধান অনুমোদন করেন। শুরু থেকে বিতর্ক ছিল যে, পাকিস্তানের জন্য সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে জেনারেল ইয়াহিয়ার চাপিয়ে দেয়া লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) শর্ত মেনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করতে পারেন কি না। তখন দাবি ছিল, নতুন করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। বিপুল জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কারো কথায় কর্ণপাত করেননি। তিনি ও তার দল সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের আলোকে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সংবিধান যেহেতু নাগরিকদের সাধারণ ইচ্ছার (জেনারেল উইল) বহিঃপ্রকাশ, সেহেতু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গণভোট করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।

 

 

 
 

১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে তখনকার বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিমত প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও সে সময়ে ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী দলগুলো নিষিদ্ধ থাকায় তাদের পক্ষে মতপ্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তবে তখনকার শাসকরা তাদের হিসেবেও রাখেননি। মজার বিষয় হলো- যদিও আওয়ামী লীগ তখন দাবি করেছিল, বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অন্যতম সেরা সংবিধান, তথাপি তারা মাত্র দুই বছরের মাথায় চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের খোলনলচে পাল্টিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্র, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে একদম খর্ব করা হয়েছিল। অর্থাৎ চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিকেও ভূলুণ্ঠিত করা হয়।

 

 

 

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ইসলামী মূল্যবোধ সংবিধানে সন্নিবেশিত করেন। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে আবার সংবিধান সংশোধন করে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালে সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিক্রমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছিল তারা ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে সেটিকেও বাতিল করে দেয়। এভাবে বড় দাগে সংবিধানে বারবার পরিবর্তনের ফলে শেখ হাসিনা চরম স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার রাস্তা তৈরি করেন। তিনি বারবার প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সুযোগ পেয়ে যান।

 

 

 

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার সাম্রাজ্যের তখতেতাউস তাসের ঘরের মতো উবে যায়। দেশের মানুষ একটি গণতান্ত্রিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নতুন স্বপ্ন দেখছে। তার অংশ হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংবিধান সংস্কার। কারো কারো মতে, বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করা উচিত; আবার কারো মতে সংশোধন করলেই চলবে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণ নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি শুরু থেকে বলে আসছে, একটি গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, সংবিধান পুনর্লিখিত হওয়া উচিত।

 

 

 

বিশিষ্ট লেখক ফরহাদ মজহারও তাই মনে করেন। ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কমিশন লিখিত মতামত চেয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন মতামত দিয়েছে। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফায় ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

 

 

প্রথমত, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সাম্য, সামাজিক সুবিচার, মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের সুপারিশ করা হয়। প্রায় সব দল বহুত্ববাদ গ্রহণ না করায় ঐকমত্য কমিশন বহুত্ববাদ পরিহার করে সাম্য, সামাজিক সুবিচার, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্রের প্রস্তাব করেছে। এ নিয়ে ডান ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে একটি অভিন্ন মতামত দেখা গেলেও বাম ও সেকুলার ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটি বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছে। বিএনপি ও ইসলামপন্থীরা পঞ্চম সংশোধনীতে উল্লিখিত ‘আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা’ রাখার পক্ষে অভিমত দিয়েছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, বিষয়টি তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে রাখতে পারে এবং জনগণ তার পক্ষে মত দিলে তারা পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে সংবিধানে সংযুক্ত করার সুযোগ পাবে।

 

 

দ্বিতীয়ত, জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট থাকবে নাকি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা হবে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ১০০ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ কক্ষ গঠন করার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে উচ্চ কক্ষের জনপ্রতিনিধিরা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন তা নিয়ে এখনো মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কোনো কোনো দল নিম্নকক্ষে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যার অনুপাতে উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচনের পক্ষে। অপর দিকে, অনেক দল নিম্নকক্ষে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে উচ্চ কক্ষে সদস্য নির্বাচনের পক্ষে। আবার কোনো কোনো দল ৫০ শতাংশ ভোটের সংখ্যানুপাতিক ও ৫০ শতাংশ প্রাপ্ত আসন সংখ্যার অনুপাতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করেছে। সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় কী ফয়সালা হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

 

 

তৃতীয়ত, নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ক’টি আসন থাকবে তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বহু দল নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ নির্ধারণ করার পক্ষে মত দিয়েছে। বেশ কিছু দল নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে বিভিন্ন দলের নারী সদস্য নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপি বিদ্যমান নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের সংখ্যানুপাতে নারী সদস্য নির্বাচনের পক্ষে। অপর দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি দল নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের অভিমত অনুযায়ী, প্রতি তিনটি সংসদীয় আসনের বিপরীতে একজন নারী প্রার্থী নির্বাচিত হবেন।

 

 

অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন, যেখানে বিদ্যমান একটি আসনে একজন প্রার্থীর নির্বাচন করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে একজন নারী প্রার্থী তিনটি আসনের বিশাল এলাকা কিভাবে সামাল দেবেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হবে। বিষয়টিতে কিভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

 

 

চতুর্থত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। ১৯৯৬ সালে জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তখনকার ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার প্রথমে এর বিরোধিতা করলেও আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিয়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আওতায় ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন অনেকটা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে দিলে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এরপর সংবিধান মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রথম কয়েকটি অপশন বাদ দিয়ে শেষ অপশনে থাকা রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হলে প্রচণ্ড রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দেয়। ফলে সামরিক বাহিনী সমর্থিত এক-এগারোর সরকার গঠিত হয়।

 

 

ওই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেয়ে অধিকতর সময় নেয় ও ব্যাপক ক্ষমতা চর্চা করে। তারা ২০০৮ সালে যে নির্বাচন করে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এরপর ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। যদিও ওই রায়ে আরো দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তার প্রতি তোয়াক্কা না করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। এরপর তিনটি প্রহসনের নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের প্রতি বিরাট চপেটাঘাত। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ হটানোর পরে এখন জনআকাক্সক্ষা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করা। এবারে সবাই একমত হলেও এর গঠন কাঠামো বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে উপনীত হতে পারেনি।

 

 

পঞ্চমত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে যে দল সরকার গঠন করে তাদের প্রার্থী সহজে নির্বাচিত হয়ে যান। আর যদি সরকারে প্রধানমন্ত্রীর আধিপত্য থাকে তা হলে তিনি যে কাউকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি, যিনি রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তি তার নির্বাচনে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোনো মতামত প্রতিফলিত হয় না। বর্তমান রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়ে থাকে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন উভয়ই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করেছে।

 

 

সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদের উভয়কক্ষের প্রতি সদস্যের একটি করে ভোট, প্রতিটি জেলা সমন্বয় কাউন্সিলের একটি করে ভোট এবং সিটি করপোরেশনগুলোর সমন্বিত একটি ভোট নিয়ে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন ইলেক্টোরাল কলেজ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশ অনেক দল এ কারণে গ্রহণ করেনি যে, পাকিস্তান আমলে স্বৈরাচারী আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র নামে ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকেন। এর বিপরীতে যুক্তি হলো- সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত থাকে। তিনি যদি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন তালে মনস্তাত্ত্বিকভাবে তিনি নিজেকে বেশি শক্তিশালী মনে করবেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন একটি মাত্র নির্বাচনী এলাকা থেকে; আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন ৩০০টি নির্বাচিত এলাকা থেকে। ফলে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হতে পারে। দেখা যাক, ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে কি না।

 

 

ষষ্ঠত, প্রধানমন্ত্রী পদে কতবার থাকা যাবে। পতিত সরকারের আমলে দেখা গেছে, প্রহসনের নির্বাচন করে শেখ হাসিনা একাধারে তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেয়া হয়, এক ব্যক্তি দীর্ঘকাল একই পদে বিশেষত প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে নিজে ধরাকে সরাজ্ঞান করেন। তাই ওই পদের মেয়াদ সীমিত করে দেয়া সমীচীন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রেসিডেন্ট জীবনে দু’বারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। আবার থাইল্যান্ডে একজন প্রধানমন্ত্রী জীবনে আট বছরের বেশি ওই পদে থাকতে পারেন না।

 

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব দল প্রায় একমত যে, একজন প্রধানমন্ত্রী জীবনে ১০ বছরের বেশি ওই পদে থাকতে পারবেন না। তবে বিএনপি বিষয়টিকে শর্তযুক্ত করতে চায় যে, সেক্ষেত্রে সংবিধানে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি বলে সংবিধানে কিছু না রাখা। তাদের মতে, এটা রাখা হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পাবে। বিষয়টি আরো আলোচনার পর সবাই একটি পয়েন্টে একমত হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

 

লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব