কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল অভিষেক হচ্ছে ট্রাম্পের

সূত্র : দেশ রূপান্তর, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল অভিষেক হচ্ছে ট্রাম্পের

শপথগ্রহণের মাধ্যমে তার নতুন প্রশাসনের যাত্রা শুরু হবে। এই দিনটিকে ঘিরে শপথগ্রহণ, উদ্বোধনী ভাষণ, সংগীত পরিবেশন, প্যারেড এবং গালা ডিনারসহ নানা ধরনের আয়োজন থাকে। ট্রাম্প তার শপথের মধ্য দিয়ে নতুন কর্মযজ্ঞ শুরু করবেন, তার সরকারের পরিকল্পনা জানাবেন। এ বিষয়ে লিখেছেন অনিন্দ্য নাহার হাবীব নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউজে ফিরে আসবেন।

 

সেদিন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন। শপথ গ্রহণের দিনটিতে থাকবে একটি আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান, সংগীত পরিবেশনা, একটি উদযাপন মিছিল ইত্যাদি। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও সেদিন শপথগ্রহণ করবেন। ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে যোগ দিয়ে তাদের নতুন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন।

 


শপথগ্রহণ দিবস ঐতিহ্যগতভাবে আনুষ্ঠানিকতা এবং জাঁকজমকের জন্যই পরিচিত। একজন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যান, আরেকজন সেখানে প্রবেশ করেন। ওয়াশিংটন, ডিসির সরকারি নেতাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পরিবর্তনের এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম দিনেই সীমান্ত নিরাপত্তা থেকে তেল ও গ্যাস উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 


শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হলো একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন, যা এক প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ এবং নতুন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের সূচনা নির্দেশ করে। এই অনুষ্ঠানের একটি প্রধান মুহূর্ত হলো যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথ বাক্য পাঠ করেন : ‘আমি শপথ করছি যে, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদটি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করব এবং আমার সাধ্যমতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংরক্ষণ, সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা করব।’ ট্রাম্প নভেম্বরে নির্বাচন জিতলেও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হবেন এই শপথ বাক্য পাঠ করার পরই। এর আগে তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

 

 

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ২০ জানুয়ারির দুপুর ১২টা (বা যদি সেই দিনটি রবিবার হয়, তবে পরদিন) থেকে শুরু হয় এবং প্রেসিডেন্ট শপথগ্রহণ করেন। ট্রাম্পও সে সময় অনুযায়ীই শপথগ্রহণ করবেন। তার শপথগ্রহণ পরিচালনা করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। প্রথাগতভাবে, অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান মার্কিন কংগ্রেস ভবনের বাইরে অনুষ্ঠিত হয় এবং দর্শকদের জন্য জায়গা তৈরি করা হয় ন্যাশনাল মলচত্বরে। তবে এ বছর সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে তীব্র শীতের কারণে এটি এখন কংগ্রেস কমপ্লেক্সের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

তাপমাত্রা-১১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ-৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত শুক্রবার, ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন যে, আবহাওয়ার কারণে স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। তিনি লিখেছেন, যে তিনি চান না যাতে মানুষ কোনোভাবে আহত বা বিপদগ্রস্ত হয়।’ এ বছরের অধিষ্ঠান বক্তৃতা, ভাষণ এবং অন্যান্য কার্যক্রম কংগ্রেস ভবনের ভেতরে স্থানান্তরিত হবে, তেমনি অতিথি, আইনপ্রণেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্যও স্থান পরিবর্তন করা হবে। অন্যান্য উপস্থিত ব্যক্তিরা ক্যাপিটাল ওয়ান এরেনা থেকে লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন।

 

 

ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের পর সেখানে দর্শকদের কাছে যাবেন। অত্যধিক খারাপ আবহাওয়ার কারণে অধিষ্ঠান অনুষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন এটি প্রথম নয়। ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান ইনডোরে স্থানান্তর করা হয়েছিল এবং অস্বাভাবিক শীতের কারণে প্রচলিত প্যারেডটি বাতিল করা হয়েছিল। ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার উদ্বোধনী ভাষণ হবে উৎসাহব্যঞ্জক ও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট, ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি  ক্ষমতা হস্তান্তর এবং শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। 

 

 

ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণের দিন শুরু হবে সেন্ট জনস চার্চ, লাফায়েত স্কোয়ারে, এটি একটি ঐতিহাসিক ওয়াশিংটন ডিসি চার্চ।  এরপর হোয়াইট হাউজে চা পরিবেশন হবে। সংগীতের পরিবেশনা এবং উদ্বোধনী বক্তব্য বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী সকাল ৮.৩০-এ শুরু হবে। এরপর ট্রাম্প এবং ভ্যান্স ক্যাপিটল রোটন্ডায় শপথগ্রহণ করবেন। তারা  বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথগ্রহণ করবেন।

 

 

তবে সবসময়ই যে বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথগ্রহণ করা হয়, এমনটি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান উল্লেখ করে না যে শপথগ্রহণে কী অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। যদিও বেশিরভাগ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের অনুসরণে বাইবেল ব্যবহার করেন। জন কুয়িনসি অ্যাডামস (যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট) একটি আইন বই ব্যবহার করেছিলেন এবং টেডি রুজভেল্ট (যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম প্রেসিডেন্ট) কোনো বই-ই ব্যবহার করেননি।

 

এ বছর, ট্রাম্প দুটি বাইবেল ব্যবহার করবেন একটি তার ব্যক্তিগত বাইবেল, যা ১৯৫৫ সালে তার মা তাকে উপহার দেয় এবং ঐতিহাসিক লিংকন বাইবেল, এটি ভেলভেটে বাঁধাই করা বাইবেল, যা ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের শপথ গ্রহণে ব্যবহৃত হয়েছিল। এরপর ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন, যাতে তিনি পরবর্তী চার বছরের জন্য তার লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। ট্রাম্প এরপর প্রেসিডেন্ট রুমে সিনেট চেম্বারে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে স্বাক্ষর করতে যাবেন।

 

তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কমিটির আয়োজনে একটি মধ্যাহ্নভোজন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর একটি কুচকাওয়াজ হবে, যা ক্যাপিটল ভবন থেকে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে হোয়াইট হাউজে পৌঁছাবে।  তবে এ বছর কুচকাওয়াজটি কীভাবে হবে তা স্পষ্ট নয়। সন্ধ্যায় ট্রাম্প শহরের তিনটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কমান্ডার ইন চিফ বল, লিবেরটি উদ্বোধনী বল এবং স্টারলাইট বলে উপস্থিত হবেন। তিনি তিনটি অনুষ্ঠানেই বক্তব্য রাখতে পারেন।

 

 

কারা হচ্ছেন অতিথি

স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা আশা করছেন প্রায় দুই লক্ষ মানুষ ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত হবে, যার মধ্যে ট্রাম্প সমর্থক এবং বিরোধীরাও থাকতে পারেন। অনেক মার্কিন সিনেটর এবং হাউজ সদস্যও এতে অংশগ্রহণ করবেন, সঙ্গে নতুন প্রশাসনের অতিথিরাও থাকবেন। ট্রাম্প, ভ্যান্স এবং তাদের পরিবারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডিরাও অতিথি তালিকায় থাকেন, তবে পূর্ববর্তী ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা এ বছরের অধিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলেই জানিয়েছেন তার অফিস মারফত।

 

 

মিসেস ওবামা সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জন্য অনুষ্ঠিত একটি স্মরণসভাতেও অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে তার স্বামীর অধিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি অধিষ্ঠান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম শপথ গ্রহণেও ছিলেন । তবে মিসেস ওবামার স্বামী বারাক ওবামা এবং আরও এক সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার স্ত্রী লরা বুশসহ সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে শোনা যায়।

 

 

সাবেক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও এই অধিষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না। টেক উদ্যোক্তা বিলিয়নিয়াররা, যেমন ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ উপস্থিত থাকবেন, এমনটাই প্রচারিত হচ্ছে মার্কিন মিডিয়ায়। টিকটক সিইও শোঝি চিউওর সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, তবে আর মাত্র এক দিন পর মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যাপটির ব্যান কার্যকর হতে পারে। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংও উপস্থিত থাকবেন।

 

অনুষ্ঠান মাতাবেন যারা

কান্ট্রি সংগীত গায়িকা এবং প্রাক্তন আমেরিকান আইডল জয়ী ক্যারি আন্ডারউড অনুষ্ঠানে ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’ গানটি পরিবেশন করবেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি আমাদের দেশকে ভালোবাসি এবং অভিষেকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে সম্মানিত হয়েছি। এই ঐতিহাসিক ঘটনার একটি ক্ষুদ্র অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। এটি এমন একটি সময় যখন আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে।’

 

কান্ট্রি গায়িকা লি গ্রিনউড, যিনি ট্রাম্পের দীর্ঘকালীন বন্ধু এবং সহযোগী, তিনিও অভিষেক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবেন। অপেরা গায়ক ক্রিস্টোফার ম্যাকচিওও গান গাইবেন। আমেরিকান ডিস্কো গানের দল দ্য ভিলেজ পিপল ট্রাম্পের বিজয় র‌্যালিতে রবিবার এবং সোমবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান  করবেন।  অন্যান্য পারফর্মাররা রবিবারের ট্রাম্পের র‌্যালি এবং সন্ধ্যার বালে অংশগ্রহণ করবেন। অনেকে কান্ট্রি শিল্পী, যেমন কিড রক, বিলি রে সাইরাস, জেসন অলডিন এবং রাসকেল ফ্লাটস। গায়ক গ্যাভিন ডি গ্রাও এবং র‌্যাপার নেলি পারফর্ম করবেন।

 

 

খরচ করছে কে

অনুষ্ঠানটি ট্রাম্পের অভিষেক কমিটি দ্বারা অর্থায়িত হবে। এর চেয়ারম্যান দীর্ঘদিনের ট্রাম্প-বন্ধু স্টিভ উইটকফ, একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার যিনি ট্রাম্পের পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্য দূত হওয়ার প্রার্থী এবং কেলি লফলার, একজন প্রাক্তন মার্কিন সিনেটর । কমিটি সকল খরচের ভার বহন করবে তবে ক্যাপিটলে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটির খরচ করদাতাদের টাকার মাধ্যমেই দিনশেষে পরিশোধ করা হবে। বেজোস এবং জাকারবার্গ প্রত্যেকে কমিটিতে ১ মিলিয়ন ডলার দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। অ্যাপলের সিইও টিম কুক এবং ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যানও মিলিয়ন ডলার করে দান করেছেন। উবার-এর সিইও দারা খোসরোশাহীও তহবিলের জন্য ১  মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।

 

 

ট্রাম্প তার ২০১৭ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য রেকর্ড ১০৬.৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছিলেন। এবার তার কমিটি বর্তমানে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছে, মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে।

 

গালা অনুষ্ঠান

ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাতে তার তিনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী গালাতে উপস্থিত থাকবেন। এই রাতে আরও বারোটি গালা অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছে।

গালা অনুষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি, ট্রাম্প উদ্বোধনীর আগের রাতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারিনায় একটি ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন ভিক্টোরি র‌্যালি’র আয়োজন করবেন।