কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার সুবিধা

জাকির হোসেন । সূত্র : দেশ রূপান্তর, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার সুবিধা

১৯৯৭ সালে মাত্র ২৪ জন গ্রাহক নিয়ে চালু হয় পল্লী ফোন। বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান দূর করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে এই কর্মসূচি। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মাধ্যমে পরিচালিত পল্লী ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা ২০১৬ সালের জুনে ১৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়। গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র মহিলা সদস্যদের উদ্যোক্তা-দক্ষতা ব্যবহার করে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি অনন্য হাতিয়ার হিসেবে এই পল্লী ফোন চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে মোবাইল ফোন যখন বিশ্বের যেকোনো দেশে বিলাস পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতো, তখন বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের জন্য মোবাইল ফোন ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। গ্রামে তখন কোনো ধরনের টেলিফোন সেবা পাওয়া যেত না। শহরেও এটা বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে ছিল। গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণফোনের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়ে পুরো দেশকে টেলিফোন সেবার আওতায় নিয়ে আসার কর্মসূচি হাতে নেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র ঋণগ্রহীতা নারীদের মাধ্যমে, যারা পরবর্তী সময়ে ‘টেলিফোন লেডি’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। আর সর্বসাধারণের কাছে ফি’র বিনিময়ে মোবাইল ফোন সুবিধা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন। গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে, একটি অগ্রগামী শক্তি হিসেবে গ্রামের দরিদ্র নারীদের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রমাণ। একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্কের সঙ্গে ভিডিও কলে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন তারা। ইতিমধ্যে স্টারলিংককে বাংলাদেশে ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে সরকার। 

 

২০০৮ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প ঘোষণা করেছিল, তার আওতায় ২০১৮ সালে এসে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ঠিক করা হয়। লক্ষ্যের একটি ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে সড়কে টোল আদায়ের কাজটি স্বয়ংক্রিয় করা, যাতে যানবাহনকে থামতে না হয়। ২০২২ সালের শেষে এসে দেখা যায় একটি সড়কেও এই ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) অথবা ইন্টারনেট অব এভরিথিং-ভিত্তিক (আইওই) স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হয়নি। এর মধ্যেই ২০২৪ সালে এসে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় আওয়ামী লীগ। মূলত আইসিটি খাতে লুটপাটই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পর্যালোচনা সভায় গত ৩ সেপ্টেম্বর সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে মোট ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। জুলাই আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে সারা দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। যদিও অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে বন্ধ করতে স্টারলিংককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।  স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ১৬ বছরের শাসনকালে অনেকবার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। বিক্ষোভ দমন করতে বা বিরোধী কোনো বড় আন্দোলন দমন করার ক্ষেত্রে  স্বৈরশাসক ও একনায়কদের প্রিয় একটি হাতিয়ার হচ্ছে ইন্টারনেট শাটডাউন।

 

 

 

স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট সেবায় আইনানুগ আড়িপাতার সুযোগ রেখে, নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নতুন নির্দেশিকা বা গাইডলাইনের নাম ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’। আসলে স্টারলিংক হলো একটি সিস্টেম। মোট ৪২ হাজার লো আর্থ অরবিট বা এলইও স্যাটেলাইট দিয়ে একটি ইন্টারনেট কাভারেজ তৈরি করতে যাচ্ছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। ইলন রিভ মাস্ক হলেন একজন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যত বেশি পরিমাণ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হবে, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা তত উন্নতমানের হবে। ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠিয়েছে। স্টারলিংক সিস্টেম তার স্থাপনের ঝামেলা ছাড়াই ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এখন যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়, তা সাবমেরিন কেবলনির্ভর। অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়। সাবমেরিন কেবল-নির্ভর ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংকের এটা অন্যতম বড় পার্থক্য। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে। সমুদ্রের তলদেশে বসানো এই তার কোনো কারণে কাটা পড়লে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে। স্টারলিংকের সেবা ব্যবহারে এই ঝামেলা পোহাতে হয় না। এ ছাড়া গোপনীয়তা বজায় রেখে যোগাযোগের সুযোগ দিয়ে থাকে স্টারলিংক। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা সচল থাকে। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শীত, গরম, ঝড়, ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। আবহাওয়ার তীব্রতাভেদে সিগন্যাল দুর্বল হলেও, ইন্টারনেট সংযোগ বহাল থাকবে। স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে। স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যান্টেনার মতো একটি ডিভাইস (যন্ত্র) বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। গ্রাহক এই অ্যান্টেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে ইন্টারনেট সেবা পান। স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে।

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’র গত জানুয়ারির হিসাবে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪০ এমবিপিএসের কিছু কম। আপলোডের গতি ১৩ এমবিপিএসের মতো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি প্রায় ৫১ এমবিপিএস। আপলোডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪৯ এমবিপিএস। অবশ্য বাসাবাড়িতে সাধারণ গ্রাহকরা গতি পান আরও কম। গ্রামে অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সংযুক্ত হওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্টারলিংক থেকে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হবে।

 

১. দূরবর্তী ও দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা : বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ ও পার্বত্য অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা নেই। স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট এসব অঞ্চলে সহজেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে পারে। এতে ডিজিটাল বিভাজন কমে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

 

২. ডিজিটাল ইকোনমি ও ই-গভর্ন্যান্সের উন্নয়ন : নির্ভযোগ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং এবং রেমিট্যান্স সেবার প্রসার ঘটবে। সরকারি সেবা যেমন ই-গভর্ন্যান্স, টেলিমেডিসিন এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যকরভাবে চালু করা সম্ভব হবে। 

 

 

৩. জরুরি যোগাযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে প্রচলিত ইন্টারনেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্টারলিংকের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক জরুরি যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ কার্যক্রমে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে।

 

৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন : প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেল সেন্টারে উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা যাবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনসাল্টেশন করে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি পাবে। 

 

৫. ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নতি : উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিমোট ওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সিং (আপওয়ার্ক, ফাইভার) এবং আউটসোর্সিং সেক্টর আরও শক্তিশালী হবে। টেক স্টার্টআপগুলো গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। 

 

৬. প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে সুবিধা : স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে সীমান্ত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যাবে। ড্রোন এবং স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেমে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

 

৭. প্রতিযোগিতা ও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট : স্টারলিংকের প্রবর্তন হলে স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে স্টারলিংক ব্যবহারে বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

১) উচ্চ খরচ : ডিভাইসের মূল্য : স্টারলিংক কিট (অ্যান্টেনা+রাউটার) এর দাম প্রায় ৫০০-৭০০ ডলার। বাংলাদেশি বিনিময় হারে তা প্রায় ৬০ থেকে ৮৪ হাজার টাকা। যা স্থানীয় আইএসপি যেমন বিটিসিএল, গ্রামীণ, বাংলালিংকের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাসাবাড়িতে তাদের সেবা নিতে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। সেখানে থাকে একটি রিসিভার বা অ্যান্টেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটাকে স্টারলিংক কিট বলা হয়, যার মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত (৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)। আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিটের দাম ও মাসিক ফি দ্বিগুণের বেশি। তবে দেশ ভেদে দামে ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মাসিক সংযোগ ফি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

২) আবহাওয়ার প্রভাব : ভারী বৃষ্টি বা মেঘলা আবহাওয়ায় সিগন্যাল বিঘ্নিত হতে পারে। ৩) লাইসেন্সিং ও আইনি জটিলতা : বেসরকারিভাবে ব্যবহার করলে জরিমানা বা ডিভাইস বাজেয়াপ্তের ঝুঁকি আছে।

 

৪) ডেটা ক্যাপ : কিছু প্ল্যানে উচ্চগতির পর ডেটা থ্রটলিং (স্পিড কমানো) হতে পারে, যা ভারী ইউজার (স্ট্রিমিং, ডাউনলোড) এর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।

 

৫) স্থানীয় আইএসপির সঙ্গে এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা : শহরাঞ্চলে ফাইবার বা ৪এ নেটওয়ার্কের তুলনায় স্টারলিংকের দাম ও সেবা কম প্রতিযোগিতামূলক মনে হতে পারে।

 

৬) পরিবেশগত উদ্বেগ : স্যাটেলাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি মহাকাশে ডেব্রিস (স্পেস জান্ক) এবং আলো দূষণের ঝুঁকি বাড়ায়। স্টারলিংক বাংলাদেশের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। বিশেষ করে যেখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার দুর্বল। তবে উচ্চ খরচ, লাইসেন্সিং ইস্যু এবং আবহাওয়ার সংবেদনশীলতা এর ব্যবহার সীমিত করতে পারে। সরকার যদি সহজ শর্তে লাইসেন্স দেয় এবং স্থানীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে খরচ কমানো হয়, তাহলে এটি ডিজিটাল বিভাজন কমাতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও সংবাদ বিশ্লেষক