কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

সুইস ব্যাংকে আবার বেড়েছে বাংলাদেশীদের টাকা

[সূত্র : বণিকবার্তা, ২০ জুন ২০২৫]

সুইস ব্যাংকে আবার বেড়েছে বাংলাদেশীদের টাকা

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, যদি কোনো বাংলাদেশী তার নাগরিকত্ব গোপন করে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি এ প্রতিবেদনে।

 

 

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৪ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৬ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৬৭৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গতকাল সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

 


এসএনবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীরা ২০২৩ সালে জমা করেছিলেন ১ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার সুইস ফ্রাঁ। আর ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার সুইস ফ্রাঁ এবং ২০২১ সালে ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার ও ২০২০ সালে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ৩৩ হাজার সুইস ফ্রাঁ।

 

 


সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, যদি কোনো বাংলাদেশী তার নাগরিকত্ব গোপন করে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি এ প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশীদের টাকার পরিমাণ বলা হয়েছে। আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে, সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই।

 

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল সুইস ব্যাংকে। ২০০২ সালে আমানত ছিল মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

 

 

বাংলাদেশ থেকে নানা মাধ্যমে অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।

 

 

সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহু দিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। ফলে ধারণা করা হয় যে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক।

 

 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুইস ব্যাংকে গত বছর ভারতীয় নাগরিকদের জমা করা অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটিতে ভারতীয়দের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি ২৬ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০২১ সালে তা ৫০ শতাংশ বেড়ে ৩৮২ কোটি ৮৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়। ২০২২ সালে জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ২ লাখ ৬১ হাজার সুইস ফ্রাঁ। ২০২৩ সালে ভারতীয়দের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ১০২ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার সুইস ফ্রাঁ। সর্বশেষ ২০২৪ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ৪২ লাখ ৪৬ হাজার সুইস ফ্রাঁ।

 

গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় পাকিস্তানের নাগরিকদের জমা করা অর্থের পরিমাণ কমেছে। ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে পাকিস্তানিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার সুইস ফ্রা। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার ও ২০২২ সালে ৩৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার সুইস ফ্রাঁ। ২০২১ সাল শেষে হয় ৭০ কোটি ৫৯ লাখ ফ্রাঁ, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৪ কোটি ২২ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

 

 

সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বা টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। এ গোপনীয়তার নীতির কারণে সারা বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখেন। কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতি বছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে,৷ তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।

 

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সুইস ব্যাংকগুলোয় জমা থাকা অর্থের কত শতাংশ অবৈধভাবে উপার্জিত সেটি সঠিকভাবে বলার সুযোগ নেই। অনেকে বৈধ ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায়ও সেখানে অর্থ পাঠাতে পারেন। আবার নিরাপদ ব্যাংকিং সিস্টেমের কারণে বিদেশে থাকা বাংলাদেশীরাও তাদের বৈধ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় জমা রাখতে পারেন। তবে ধারণা করা হয় এর সিংহভাগ অর্থ অবৈধ। গত বছরেই যে প্রথমবারের মতো সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থ বেড়েছে এমন নয়। এর আগেই এক বছরের তুলনায় আরেক বছরে অর্থের পরিমাণ ওঠানামা করেছে। এ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট উপসংহারে আসা কঠিন। তবে গত বছরের পুরোটা সময়জুড়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময় গেছে। ফলে যাদের কাছে টাকা ছিল এবং যারা দেশে টাকা রাখাটা নিরাপদ মনে করেন না তারা সুইস ব্যাংকগুলোয় অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন। যে কারণে আগের তুলনায় গত বছর জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে।’

 

 

সুইজ্যারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখানে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড নামে একটি সিস্টেম রয়েছে, যেটাতে বাংলাদেশ এখনো অংশগ্রহণ করেনি। এই সিস্টেমে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুপারিশ ছিল। এই সিস্টেমে অংশগ্রহণ করা হলে এ অর্থ বৈধ নাকি অবৈধ, কী প্রক্রিয়ায় এ অর্থ গিয়েছে, কার অর্থ, কোন ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ অর্থ গিয়েছে সেসব তথ্য আমাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ জানতে পারত। এ সুযোগটা বাংলাদেশ এখনো নেয়নি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের ১২২টি দেশ এ সুযোগ নিয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের সময়ে এ সুযোগ গ্রহণের উদ্যোগ দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এটি গ্রহণের সুযোগ ছিল। এসব তথ্য জানা থাকলে দেশ থেকে এ অর্থ পাচার ঠেকানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া সহজ হতো।’