কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

শুল্কযুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব ও বাংলাদেশ

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

শুল্কযুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব ও বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত হারে শুল্কারোপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য অনুকূলে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আগেরবার ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন।

 

 
উদ্দেশ্য ছিল সব ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য নিশ্চিত করা। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বিগত ৪০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৯.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। চীন এবং আরো কিছু দেশের তৈরি পণ্যের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত মার্কিন পণ্য বাজারে মার খাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) বারবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করেছে। ফলে দেশটিতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 

এই পরিস্থিতিতে আমদানি পণ্যের ওপর অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপ করা হলো কেন সে সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে।

 
আর এমন সব দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিকূলে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৬০টি দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিকালে যেসব পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করে, তাকে ভিত্তি ধরে তার অর্ধেক হারে বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গড় শুল্কহারকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
 
যেমন—বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ কোনো কোনো মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে থাকে। কিন্তু সাধারণভাবে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫-১৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে। তবে দ্বিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের অনুকূলে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ হচ্ছে 
৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকে। তিন দশক আগে অর্থাত্ ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কোনো কোনো পণ্যের ওপর বাংলাদেশ প্রায় ৭১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছিল। কাজেই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ কোনোভাবেই সংগত নয়। ট্রাম্প প্রশাসন চীন বাদে অন্য দেশগুলোর আমদানি পণ্যের ওপর ধার্যকৃত বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। উপরন্তু চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে চীনা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ হারে বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে। 

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক. তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে। এ ধরনের শুল্কারোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ, তা বিবেচনার দাবি রাখে। এই বাড়তি শুল্কারোপ বাস্তবায়িত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য লাওসের পণ্যকে ৪৮ শতাংশ হারে শুল্ক প্রদান করতে হবে। ভিয়েতনামকে ৪৬, শ্রীলঙ্কাকে ৪৪, মায়ানমারকে ৪৪, বাংলাদেশকে ৩৭, পাকিস্তানকে ২৯, ভারতকে ২৬, দক্ষিণ কোরিয়াকে ২৫, মালয়েশিয়া ও জাপানকে ২৪ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ২০ এবং ইসরায়েলকে ১৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্কারোপের ক্ষেত্রে করের হারে কিছুটা তারতম্য করলেও কোনো দেশকেই ছাড় দেয়নি। এমনকি ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলও বাদ পড়েনি। ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করে। দেশটি হয়তো আশা করেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে, কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

 

 

ভারতের বিরোধী দলের নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্য পি চিদাম্বরম এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা সব ধরনের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে। ভারতে উত্পাদিত গাড়ির এক-পঞ্চমাংশই আসে রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশই আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এটি শুধু গাড়িশিল্পের ক্ষতির পরিসংখ্যান—সাধারণভাবে বর্ধিত শুল্কারোপের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া কতটা হবে, সেটি এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

 

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাইরের দেশের পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ করেছে চীনকে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের ব্যাপক উপস্থিতি। এমনকি তুলনামূলক সস্তা চীনা পণ্যের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে উত্পাদিত স্থানীয় পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মার খেয়ে আসছে। এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে অনেক দিন ধরেই বিবাদ চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে একাধিকবার অভিযোগ করেছে যে চীন ইচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা অবমূল্যায়ন করে রাখে। এতে চীনা রপ্তানিকারকরা উত্সাহিত হন। অবশ্য চীন এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি, ৬০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। মেক্সিকো দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই দেশ থেকে ৫০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়।

 

 

আর চীন থেকে ৪৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। শুল্কারোপের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চীন বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়ে যাবে। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার আরো বাড়ানো হবে। অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত বর্ধিত শুল্কহার তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ থেকে অনুধাবন করা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে বাণিজ্যক্ষেত্রে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। বিশ্বনেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপের এই উদ্যোগকে ‘অন্যায্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ বিশ্ববাণিজ্যকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে—এটি নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য কার্যত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর। অঞ্চল হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। আর একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মূলত তৈরি পোশাক নির্ভর। আর এর বড় অংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ প্রতিবছর তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যে তুলা আমদানি করে তার প্রায় ১০ শতাংশই আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কহার কার্যকর হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উত্পাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ভোগ ব্যয়ের সামর্থ্য কমে যেতে পারে। সেই অবস্থায় মার্কিন আমদানিকারকরা আগের তুলনায় কম পণ্য আমদানি করবেন।

 

 

আমদানি পণ্যে বাড়তি শুল্কারোপের উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করবে। চীনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তারা পণ্য উত্পাদনে ভিন্নমুখিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে তারা একটি বা দুটি দেশের ওপর নির্ভর করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। তারা বিশ্বব্যাপী তাদের উত্পাদিত পণ্য ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। চীনা পণ্য গুণগত মানসম্পন্ন এবং মূল্য সাশ্রয়ী হওয়ায় ভোক্তারা লুফে নিচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, সীমিতসংখ্যক পণ্য ও সামান্য কয়েকটি গন্তব্যে রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্প সম্পূর্ণরূপে আমদানি করা কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও মধ্যবর্তী পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফলে খাতটি থেকে যে রপ্তানি আয় হয়, তার পুরোটা জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে না।

 

 

অবশ্য অনেকেই মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় বর্ধিত শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য তা মঙ্গলজনক হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ চীনের তুলনায় কম মূল্যে পণ্য জোগান দিতে পারবে। একই সঙ্গে চীনের কারখানাগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অন্য দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকবে। চীনের বিনিয়োগকারীরা যদি তাঁদের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে আসেন, সেটি মঙ্গলজনক হতে পারে।  

 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে পত্র দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছে, বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে বাংলাদেশ কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের শুল্কহার কমাতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর যে পরিমাণ তুলা রপ্তানি করে, তার ৫ শতাংশ আমদানি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া হাঁসের পালক আমদানি করে ২২ শতাংশ। লোহার টুকরা ১২ শতাংশ, মটর ডাল ৯ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে জাহাজভাড়া ছাড়া মোট ২২১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আর বাংলাদশের তথ্য মোতাবেক জাহাজভাড়াসহ বাংলাদেশ মোট ২৯১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

 

 

ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালানো যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে প্রত্যক্ষ করেছি, কোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। সেই আলোচনার মাধ্যমে বেশির ভাগ সময়ই সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়। বর্ধিত শুল্কারোপ আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও এ বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

 

 

তারা বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশের ওপর যে বর্ধিত শুল্কহার আরোপ করা হয়েছে, তা যথাযথ নয়। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এটি আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে। দু-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে মার্কিন পণ্যের ওপর বাংলাদেশ ১৫-১৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে থাকে। কাজেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরোপিত বাড়তি শুল্কহার কমানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কিভাবে এবং কতটা কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার ব্যাপকভাবে কমাতে পারে।

 

লেখক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত