কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

তৈরি পোশাক নির্ভরতার ঝুঁকি ও চামড়া খাত

ড. মো. আইনুল ইসলাম [প্রকাশিত: জনকণ্ঠ, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫]

তৈরি পোশাক নির্ভরতার ঝুঁকি ও চামড়া খাত

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্পটি প্রধানত তৈরি পোশাক (রেডি মেইড গার্মেন্ট-আরএমজি) খাতের সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল, যা বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এই খাতটি দ্রুত শিল্পায়ন ঘটিয়েছে এবং বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে (বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন) অসামান্য ভূমিকাও রেখেছে। কিন্তু এই একক খাতের ওপর প্রায় সর্বাত্মক নির্ভরতা দেশের অর্থনীতিকে এমন একটি গুরুতর কাঠামোগত ঝুঁকির মুখে ফেলেছে যে, টেকসই ও স্থিতিস্থাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশে জন্য এখন এই খাত হয়ে উঠেছে ‘গলার কাঁটা’।

 

 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের পরিবর্তিত চাহিদা এবং বাণিজ্য নীতির অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের মতো বাহ্যিক অভিঘাত এই একক-খাতনির্ভর অর্থনীতিকে দ্রুত অস্থিতিশীল করে তোলার ক্ষমতা রাখে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রপ্তানির ওঠানামার চিত্রে স্পষ্ট হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.৪০ শতাংশে নেমে আসা এবং অক্টোবর মাসে তা ৮ শতাংশ হ্রাস পাওয়া এই ইঙ্গিতই দেয় যে, বৈশ্বিক মন্দা (কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি সংকোচন) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধ ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট (যেমন- যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, রেড-সি উত্তেজনা, ভারতের বন্দর ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি) এই খাতকে কতটা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে করে তোলে অস্থির ও অনিশ্চিত। অর্থনীতিতে এ ধরনের কেন্দ্রীভবন দেশের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করেছে।

 

 

 

 যা বহুলাংশে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি একটি এমন অবস্থা যেখানে একটি দেশ নিম্ন-মূল্যের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট আয় স্তরে পৌঁছানোর পর উচ্চতর মূল্য-সংযোজিত অর্থনীতির দিকে উত্তরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) গবেষণা বলছে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও অটোমেশন ২০৪০ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ তৈরি পোশাকসংশ্লিষ্ট চাকরির বিলুপ্তি ঘটাবে। এ ধরনের গভীর ও বহুমাত্রিক ঝুঁকি মোকাবিলায় উচ্চমূল্য সংযোজনে সক্ষম এবং দেশজ সম্পদনির্ভর চামড়া খাতের মতো কৌশলগত শিল্পে জরুরি মনোযোগ দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

 

 

 


তৈরি পোশাক নির্ভরতার ঝুঁকির তাত্ত্বিক ভিত্তি

 

 

তৈরি পোশাক খাতের অত্যধিক বিকাশ ও ফলস্বরূপ অর্থনীতির ওপর এর নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করা যায়। এই নির্ভরতা বাংলাদেশকে একটি ‘ডাচ ডিজিজ’ তত্ত্ব-সদৃশ অবস্থায় ফেলেছে। এই তত্ত্বমতে, একটি নির্দিষ্ট সম্পদনির্ভর খাতের (যেমন- তেল-গ্যাস বা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সস্তা শ্রমনির্ভর তৈরি পোশাক) অতি দ্রুত বিকাশ অন্যসব শিল্প খাতের (যেমন- চামড়া, আইটি, ঔষধশিল্প) প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হ্রাস করে। কারণ, প্রধান রপ্তানি খাত বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বাড়িয়ে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারকে শক্তিশালী করে, যা অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। অর্থনীতি শাস্ত্রের অন্যতম গুরু ডেভিড রিকার্ডোর তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব অনুসারে, তৈরি পোশাক স্বল্পমূল্যের শ্রমনির্ভর উৎপাদনে কেন্দ্রীভূত হয়ে সাময়িক সুবিধা দিলেও অর্থনীতিকে একধরনের ‘নিম্ন-দক্ষতার ভারসাম্য’ বা স্থবিরতার মধ্যে বেঁধে ফেলেছে।

 

 

 

 

এই নিম্ন-মূল্যের উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় দুর্বলতা সৃষ্টি করেছে, বহুমাত্রিক বৈষম্যের বিস্তার ঘটিয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতিকেও আঘাত করছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে সম্ভাব্য উত্তরণের পর শুল্ক সুবিধা হারিয়ে গেলে (গড়ে ৮.৭ শতাংশ শুল্ক) রপ্তানি হ্রাস বহুমাত্রিক ঝুঁকি চরমে নিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিবেদনগুলো বারংবার এই বৈচিত্র্যহীনতাকে ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’ ডেকে আনার প্রধান কারণ হিসেবে সতর্ক করছে।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তৈরি পোশাক খাত নিম্ন-মজুরির শ্রমিক (বিশেষত নারী) নিয়োজিত করে সমাজে আয় বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে। সাইমন কুজনেৎসর বক্ররেখা তত্ত্ব (কুজনেৎস কার্ভ) অনুযায়ী, প্রাথমিক উন্নয়নপর্যায়ে বৈষম্য বৃদ্ধি স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের অসমতা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানসৃষ্ট বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রমাণ। কার্ল মার্কসের শ্রমিক শোষণ তত্ত্ব এবং এমিল ডুরখেইমের অ্যানোমি তত্ত্ব অনুসারে, সমাজে যখন নিয়মকানুন, নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙে পড়ে বা স্পষ্ট থাকে না, তখন মানুষ দিশেহারা ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে, যা হতাশা-ক্ষোভ-আত্মহনন প্রবণতা ( যেমন- ২০২৪ জুলাই-আগস্টে কিশোর-তরুণ শ্রেণির নির্ভয় প্রবণতা) বাড়ায়। এটি মূলত দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন (যেমন- শিল্পায়ন) ও সামাজিক বন্ধনের দুর্বলতার কারণে ঘটে।

 

 

 

যেখানে ব্যক্তির আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রণের কোনো স্পষ্ট সামাজিক কাঠামো থাকে না। পোশাক খাতে নিম্ন মজুরি, অতি শোষণ, অসুরক্ষিত কর্মপরিবেশ (যেমন- রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি) এবং শ্রম অধিকারের অভাব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ভারসাম্যহীন করে সমাজে বিভাজন উসকে দিয়েছে। এই কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা কাটাতে উচ্চতর মূল্য সংযোজনকারী এবং দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতের বিকাশ ছিল জরুরি। কিন্তু তিন দশক ধরে বাংলাদেশের স্বজনতুষ্টি পুঁজিবাদনির্ভর শাসনব্যবস্থার চালকেরা অতি সস্তায় শ্রমিক পেয়ে শোষণভিত্তিক মুনাফার আনন্দে রাষ্ট্রের কাঠামোগত এই ভারসাম্যহীনতা জেনেবুঝেও দূর করতে সচেষ্ট হয়নি। যার জলন্ত প্রমাণ হচ্ছে চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৮। অথচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্প এলাকায় সিইটিপিতে সমস্যা থাকায় কোনো ট্যানারিকে অডিটের যোগ্য হিসেবে মনে করে না এলডব্লিউজি। ফলে ইউরোপের বাজার ধরতে না পেরে হয় চীনের কাছে খুব সস্তায় ফিনিশড চামড়া বিক্রি করে, নয়তো ভরা মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার করে ভারতে। লক্ষণীয় বিষয়, দীর্ঘসময় ধরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এই দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। জিঁইয়ে রাখা কাঠামোগত এই দুর্বলতার কারণেই ট্রাম্পের শুল্ক পাগলামিতে পড়ে সরেধন নীলমণি তৈরি পোশাক খাতকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ এখন বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম ও তুলা কিনতে বাধ্য হচ্ছে।

 

 

 

কাঠামোগত রূপান্তর ও চামড়া 
খাতের অপরিহার্যতা


ছোট ভূখণ্ড এবং জনমিতিক লভ্যাংশের মধ্যগগনে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চামড়া খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। উনিশ শতকের প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ আলবার্ট ও. হির্শম্যানের ‘অসমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি’ তত্ত্ব অনুযায়ী, অর্থনীতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু অসমতা সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট খাতকে অগ্রাধিকার দিলে সেই খাতের প্রসারের ‘পেছনের দিকে ও সামনের দিকে সংযোগ’ অন্যান্য খাতকেও ধীরে ধীরে বিকশিত করে। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা আশির দশক থেকে তৈরি পোশাককে উদারভাবে সমর্থন দিতে এই তত্ত্ব অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশগুলোয় ১০০ বছর আগে আবর্জনা শিল্প বিবেচনায় ফেলে দেওয়া তৈরি পোশাক বাংলাদেশে মূলত একটি অ্যাসেম্বলিং শিল্প হিসেবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল ‘পেছনের দিকের সংযোগ’ তৈরি করেছে (অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করে), যা অন্যান্য খাত বিকশিত করার পরিবর্তে বরং দুর্বল করেছে।

 

 

 

 এখন অর্থনীতি এমন এক ‘জটিল সন্ধিক্ষণে’ পৌঁছেছে যে, সেখানে ‘তুলনামূলক সুবিধা’কে কাঁচামাল থেকে উচ্চতর মূল্যের তৈরি পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন ও শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করা হয়ে উঠেছে বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে চামড়া শিল্পই এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য একমাত্র শিল্প, যা দেশীয় কাঁচামালের (গবাদিপশুর চামড়া) মাধ্যমে এবং শক্তিশালী ‘পেছনের ও সামনের সংযোগ’ তৈরি করে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের বিকৃতি ঢাকতে সক্ষম।
নোবেলজয়ী পল ক্রুগম্যানের ‘নতুন অর্থনৈতিক ভূগোল তত্ত্ব’ অনুসারে, শিল্পগুলো যখন ক্লাস্টারভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ‘কেন্দ্রীভূত’ হয়, তখন জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে, সরবরাহকারীরা কাছাকাছি আসে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়ে। তৈরি পোশাক একটি কেন্দ্রীভবন তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু চামড়া শিল্পের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিশেষায়িত ‘লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরি করে নতুন ক্লাস্টারভিত্তিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা গেলে, তা তৈরি পোশাকর পাশাপাশি নতুন একটি শক্তিশালী ‘কেন্দ্রীভবন’ তৈরি করবে। এটি অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। কারণ, একটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য খাতটি অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পারবে। মনে রাখতে হবে, চামড়া শিল্প বিশেষ করে ফুটওয়্যার ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন, তৈরি পোশাকর তুলনায় তুলনামূলকভাবে উচ্চ দক্ষতা ও উচ্চ মূল্য-সংযোজিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

 

 

 

 

এই খাতটি দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থান তৈরি করে মধ্যম আয়ের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, যা বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে। আর্থার লুইসের ‘দ্বি-খাত উন্নয়ন মডেল’ অনুসারে, কৃষি থেকে শিল্পে শ্রম স্থানান্তরকে এটি আরও সুষম করবে। রপ্তানি রূপরেখা অনুযায়ী, চামড়া খাতের উপাদান চাহিদা (২০২৫ সালে ৩৭০ মিলিয়ন বর্গফুট চামড়া) পূরণ করে এটি জিডিপিতে ০.৬ শতাংশ অবদান বাড়াতে পারে এবং প্রায় ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারে সামাজিক স্থিতিশীলতা। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখায় যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-মে) চামড়া রপ্তানি ১২.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা অবহেলিত একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাচিত্রকে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

 

 

 

বৈশ্বিক বাজার, প্রতিযোগিতা ও চীন-ভিয়েতনাম শিক্ষা

বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকনির্ভরতা একধরনের আন্তর্জাতিক দুর্বলতা তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের অনেক সমালোচনা থাকলেও তারা ক্রমাগত বালাদেশকে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও উচ্চ ভ্যালু-অ্যাডেড পণ্যে উত্তরণের ওপর জোর দিতে বলেছে। এক্ষেত্রে চীন-ভিয়েতনামের উদাহরণ বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়। ভিয়েতনাম পরিবেশগত মান উন্নয়ন, শক্তিশালী নীতিমালা ও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের মাধ্যমে তাদের চামড়া খাতকে বিশ্ববাজারের বড় খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। ভিয়েতনামের চামড়া রপ্তানি প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের তুলনায় ১৯ গুণ বেশি। ভারতও ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। অথচ ভারত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া চামড়ার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অনেকেই অভিযোগ করেন, ভারতে চামড়া পাচার করতেই এই খাতটিকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করা হয়েছে। এ অভিযোগের কিছুটা যৌক্তিকতা থাকলেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ না করেও এই খাতের বড় ক্ষতি করেছেন। তথ্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে গবাদিপশুর প্রাচুর্য আছে, সেখানে সঠিক নীতি গ্রহণ করলে এই বাজার ধরা সম্ভব ছিল, এখনো আছে। 
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়