ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল : ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত শেখ হাসিনা
দেশ রূপান্তর অনলাইন [সূত্র : দেশ রূপান্তর, ০১ জুন ২০২৫]

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ। আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার দপ্তরে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এস তামিম।
অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনার পাশাপাশি অভিযুক্ত হিসেবে আছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সেসময়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক থাকলেও আবদুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে রয়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগে শেখ হাসিনাকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘মাস্টারমাইন্ড’ এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল গুলির সরাসরি নির্দেশ বাস্তবায়নের তাগিদ দেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন আইজিপি মামুন।
মামলায় সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে বর্তমান সরকারের দুই উপদেষ্টা, পুলিশ সদস্য, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ ৩৫ থেকে ৪০ জনকে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ‘সম্পূর্ণ নির্মূল’ বা ‘নিশ্চিহ্ন’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি গুলি চালনার এবং পঙ্গু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত একাধিক কল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল, উদ্ধারকৃত গুলি ও অন্যান্য আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। তারও আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হয় ট্রাইব্যুনালে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রসিকিউশন মামলাটি দায়ের করে।
প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, মোট পাঁচটি অভিযোগের প্রথমটি মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘উস্কানি’ ও ‘প্ররোচনা’ দেওয়ার বিরুদ্ধে; দ্বিতীয় অভিযোগটি গুলির সরাসরি নির্দেশনার অভিযোগ। বাকি তিনটি নির্দিষ্ট ঘটনার ভিত্তিতে আনা হয়েছে।
মামলার সাক্ষীদের মধ্যে থাকবেন আহতরা, যারা চিকিৎসা নিয়েছেন এমন ডাক্তাররা এবং শহীদদের স্বজনরা, যারা মরদেহ গ্রহণ করে দাফন করেছেন। পাশাপাশি উপস্থাপন করা হবে বিভিন্ন কল রেকর্ড, অজস্র ভিডিও ফুটেজ, পত্রিকার সংবাদ কাটিং এবং উদ্ধার করা গুলির আলামত।
সূত্র আরও জানিয়েছে, অভিযোগপত্র দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল শিগগিরই শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের হাজির হতে নির্দেশ দেবেন।