কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ট্রাম্প কি পারবেন নেতানিয়াহুকে হটাতে

গাজীউল হাসান খান [সূত্র : কালের কণ্ঠ, ১৮ মে ২০২৫]

ট্রাম্প কি পারবেন নেতানিয়াহুকে হটাতে

তেলে মাথায় তেল দেওয়া তেলসমৃদ্ধ আরবদের একটি অতি পুরনো দস্তুর। তবে বর্তমান নাজুক বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা তাদের অতীতের অভ্যাসটি ঠিক রেখে সম্পূর্ণ কৌশলটি বদলে ফেলার জন্য অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। গাজা, ইউক্রেন ও ইরানে বিরাজমান বর্তমান চরম উত্তেজনা ও যুদ্ধাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (জিসিসি) সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অঞ্চলে চায় একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত করতে। তারা চায় সামরিক দিক থেকে তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের দিক থেকে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ।

 

 

 

 
দেশগুলো মনে করে, এ ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে নতুন করে কোনো দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থায় যাওয়ার আগে তাদের অতীতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত মিত্র এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটি আরো ঘনিষ্ঠ করতে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের অবশ্যই একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত অনুঘটকের ভূমিকা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তিগতভাবে বিশ্বব্যাপী তার নেতৃত্ব এবং তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলো তাদের রাজতন্ত্র ধরে রাখতে এখন অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণ বিশ্বের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

 

 

 

 
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্য কিংবা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা একদিকে যেমন ইসরায়েলের গাজাসহ সমগ্র ফিলিস্তিন গ্রাস করার অবৈধ নীতিকে দায়ী করেছেন, অন্যদিকে ইউক্রেনের ব্যয়বহুল অসম যুদ্ধকেও বিবেচনায় রেখেছেন। এই দুটি দানবীয় ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র তার সুস্পষ্ট পক্ষপাতিত্বের কারণে অনেকটা বিচ্ছিন্ন কিংবা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের বোধোদয় হচ্ছে যে পরাশক্তিগতভাবে তারা সব দিক থেকেই বিশ্বের নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ঋণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
 
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি ও সম্ভাব্য বিশ্বমন্দার মুখে যুক্তরাষ্ট্র একসময় দেউলে হয়ে পড়তে পারে। সুতরাং সে আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র যেমন মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও জ্বালানি সমৃদ্ধ আরবদের কাছে ছুটে গেছে, তেমনি আরব শাসকরাও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই চূড়ান্ত বিবেচনায় বেছে নিয়েছে।

 

 

 

সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তিনটি রাজতান্ত্রিক দেশ সফর মাত্র শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্সির এটি প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হলেও তিনি এই অঞ্চলে নতুন নন। তিন দিনের এই সফরের আগেও ইসরায়েলের বন্ধু বলে পরিচিত ট্রাম্প রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে।

 

 

 

 
ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেও ট্রাম্প রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বের দিক থেকে সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদের পাশ কাটিয়ে চলার ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর অন্যতম কারণ হলো ঐশ্বর্যশালী আরবদের সঙ্গে বিশাল অস্ত্র বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া, তেলের বাজার ও পেট্রো ডলার নিয়ন্ত্রণ করা। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বা আধিপত্য হারালে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক পর্যায়ে কোনোমতেই তাদের পরাশক্তিগত অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সে কারণে এবারও ট্রাম্প সময়মতোই উপসাগরীয় অঞ্চলে গিয়ে হাজির হয়েছেন।

 

 

ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং বিশ্ববাণিজ্যে ব্যাপক ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যখন প্রায় বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই ট্রাম্প তাঁর বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক স্বার্থে এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ চলার পথ নির্বিঘ্ন করতে এই সফরে গিয়েছেন। সে কারণে ট্রাম্পের এবারের সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তিনি একদিকে যেমন অবিলম্বে ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে চান, অন্যদিকে বিভিন্ন কৌশলে গাজা কিংবা বৃহত্তরভাবে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে উদগ্রীব। তাঁর সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্য থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল কিংবা ইউক্রেনের বোঝা বইতে পারছে না। তবে ইউক্রেনের ব্যাপারে ট্রাম্প যতটা স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারছেন, ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ততটা পারছেন না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইহুদিবাদীদের ঐক্য, সংহতি এবং তাদের ‘আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’ নামক লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক চাপ।

 

 

 

নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের উগ্র দক্ষিণপন্থী মানুষ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিবাদীরা কোনোমতেই চায় না ফিলিস্তিনের একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। তারা সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড অর্থাৎ জর্দান নদীর পশ্চিম তীর থেকে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলটি বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্রের অধীন করতে হন্যে হয়ে উঠেছে। সে কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর আগের টার্মে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ নামে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে মেনে নেয় এবং সুপ্রতিবেশী হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে। কিন্তু গত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্প হেরে গেলে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের কার্যকারিতা অনেকটাই হারিয়ে যায়। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছিলেন ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। কিন্তু ২০২৪ সালে আবার নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাষায় কথা বলতে পারছেন না।

 

 

 

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং বিশেষ করে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সদস্যরা এ ব্যাপারে এরই মধ্যে স্পষ্ট করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানিয়েছেন যে গাজা এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিন সমস্যার ব্যাপারে তাঁদের একটি সুস্পষ্ট ‘শান্তি উদ্যোগ’ বা সিদ্ধান্ত রয়েছে। আর তা হলো অবিলম্বে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। এটি ছাড়া আর কোনো কিছুই শান্তিকামী বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

 

 

 

এরই মধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন দিনের সফরকালে ট্রাম্পের কল্পনার বাইরে গিয়ে উল্লিখিত তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কারখানা নির্মাণ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং বিভিন্ন সামরিক খাতে পর্যায়ক্রমে এই বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের এই তিনটি দেশ। আরব আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার, কাতার ২১০টি সুপরিসর বোয়িং বিমান ক্রয় এবং সৌদিরা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

 

 

তা ছাড়া কাতার অস্ত্র কিনবে ৪২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। এই বিপুল অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সফররত তিনটি আরব দেশের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো ছিল তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে উল্লিখিত এই তিনটি দেশের অকল্পনীয় ও ঐতিহাসিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ফলে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশেষ করে আরব দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও তার জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

 

 

 

গত শুক্রবার অর্থাৎ আরব তিনটি দেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্মরণীয় সফরটি শেষ করার পরদিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যখন বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছিল এক নতুন পর্যায়ের আলোচনা, তখন ইসরায়েলের দখলদার সেনারা উত্তর গাজায় হত্যা করেছিল এক শর অধিক নিরীহ বুভুক্ষু ফিলিস্তিনিকে। ইসরায়েল কর্তৃক সম্প্রতি একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে প্রতিদিনই নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে গাজাবাসীকে। তাদের জন্য পাঠানো খাদ্যসামগ্রী, পানীয় জল, ওষুধপত্র ও জ্বালানি গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না তখন থেকেই। অনাহারে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা থেকে খাদ্য সরবরাহ পর্যন্ত কোনো বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা গ্রাহ্য করছেন না। এতে মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এক ভয়ানক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থ সাহায্য ছাড়া যে ইসরায়েল এক সপ্তাহও চলতে পারে না, তারা কিভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে? সে কারণে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং খাদ্যসহ জরুরি জিনিসপত্র সরবরাহের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে পশ্চিম লন্ডনে এক দীর্ঘ মার্চের আয়োজন করা হয়েছে। এতে লন্ডনে বসবাসকারী ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি বিরাট অংশও যোগ দেবে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণুচুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারেও তাঁর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কূটনৈতিকদল অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই জটিল বিষয়টি এখন সম্ভাবনার মধ্যে চলে এসেছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

 

 

 

এমন একটি পরিস্থিতিতে গাজাসহ ফিলিস্তিন ইস্যুটি দুঃখজনকভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে একমাত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নানা রকম চক্রান্ত ও বিরোধিতার কারণে। তাঁর অমানবিক আচরণ ও বিরোধিতার কারণে গাজার ২০ লক্ষাধিক মানুষ এখন চরম দুর্ভিক্ষের কবলে। এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, নেতানিয়াহুর কারণেই গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এখন বিশ্বাস করা শুরু করেছেন যে নেতানিয়াহুকে ক্ষমতায় রেখে গাজাসহ ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সমাধান খুঁজে বের করা কঠিন হবে। সে কারণে অনেকের ধারণা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ বর্তমানে ইসরায়েলের রাজনীতিকদের একটি অংশের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য বিকল্প খোঁজার ব্যাপারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বিষয়টি এত সহজ হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ক্ষমতাসীন অবস্থায় শেষের দিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের সংসদ অর্থাৎ নেসেটের উগ্র দক্ষিণপন্থী সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ইহুদিবাদীদের চাপের মুখে তা ভেস্তে গেছে।

 

 

 

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে নানামুখী চাপের মধ্যে পড়ে গেছেন। শুরুতে ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিতে চেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে গাজা ভূখণ্ডটি কিনে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এতে বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সর্বাত্মক সাহায্য নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে ধনী আরব দেশগুলো। এখন ট্রাম্প যদি সে কথা ভুলে গিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জনপ্রিয় দাবিকে ছলচাতুরী করে ঠেকিয়ে রাখতে কোনো অপচেষ্টায় লিপ্ত হন, তাহলে আরববিশ্বসহ সমগ্র বিশ্বজনমত তাঁর বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। এতে গাজাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ একটি বিশ্বযুদ্ধেও রূপান্তরিত হতে পারে। তখন ইরান ও সিরিয়া সব ভুলে চীন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রভাববলয়ের দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হবে। সে পরিস্থিতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনোমতেই সামাল দিতে পারবেন বলে মনে হয় না।

 

 

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক