কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে কি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে

দীর্ঘ ১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। এখন চলছে যুদ্ধবিরতি প্রথম ধাপ। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়াও স্থগিত করেছে তারা। এদিকে গাজা ঘিরে একের পর এক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কীভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, তা নিয়ে লিখেছেন বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিনিধি- পল অ্যাডামস। সূত্র : প্রথম আলো, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে কি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে কেন তা বিলম্ব করার ঘোষণা দিল হামাস? বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিজেদের ওই ঘোষণাকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘সতর্কীকরণ বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস। তারা বলেছে, নিজেদের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণে দখলদারদের (ইসরায়েল) ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মধ্যস্থতাকারীদের পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছে তারা।

 

 

হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মধ্যে তিনজনকে আগামী শনিবার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, পরবর্তী সময়সূচি অনুযায়ী, শনিবার জিম্মি মুক্তির বিষয়টি যেন এগিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য ‘দরজা এখনো খোলা’ আছে। এ থেকে মনে হচ্ছে চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সমাধানে সময় দিতে চায় তারা। তবে এ অচলাবস্থাটা আসলে কী?

 

 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস একরাশ অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো—বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়িতে ফেরায় বিলম্ব করানো, তাঁদের ওপর সরাসরি গুলি করা এবং গাজায় নির্দিষ্ট ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া। গাজায় যে বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিন ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তাঁদের নিজ বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অনিচ্ছার কথা উল্লেখ করেছেন হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অনেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাও।

 

 

গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকাটি থেকে চলে যেতে উৎসাহিত করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে ইসরায়েল সরকার যখন রাখঢাক না করে আলোচনা করছে—এমন একটি সময়ে আবাসস্থলের জরুরি প্রয়োজনীয়তার মধ্যে থাকা মানুষগুলোকে ফিরতে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজা থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

 

 

এই আশঙ্কাকে বলতে গেলে প্রতিদিনই আরও তীব্র করে তুলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে তাঁর পরামর্শে মনে হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের সময়টাতে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে পরে দেখা যায়, ট্রাম্প সব গাজাবাসীর নিজ ঠিকানা ছেড়ে চলে যাওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নিয়ন্ত্রণ ও শাসনের কথা বলছেন।

 

 

ট্রাম্প যখন দিন দিন তাঁর বিদ্বেষপূর্ণ পরামর্শের মাত্রা বাড়াচ্ছেন, তখন যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যৌক্তিক কি না, তা হয়তো ভাবছে হামাস। আসলে এ আলোচনাগুলো কিসের জন্য? ট্রাম্প যদি আসলেই তাঁর পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন করতে চান, তাহলে গাজা থেকে বাসিন্দাদের বিতাড়িত করার দায়িত্ব যে ইসরায়েলকে দেওয়া হবে, তা জানেন ফিলিস্তিনিরা। এ জন্য তাঁদের ঘরবাড়িতে ফিরে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করাই যথেষ্ট হবে না, বলতে গেলে নিশ্চিতভাবে শক্তি খাটানোর প্রয়োজন পড়বে। 

 

 

এখন আবার ট্রাম্প বলছেন, শনিবার নাগাদ যদি গাজায় বন্দী থাকা জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করে দেবেন এবং গাজার ‘নারকীয়’ পরিস্থিতি দেখা দেবে। যুদ্ধ আবার শুরু হওয়ার এই সম্ভাবনার মুখে হামাস হয়তো ভাবছে—বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে তাহলে লাভ কী।

 

 

বর্তমান অচলাবস্থা এবং ট্রাম্পের এই বিরক্তিকর হস্তক্ষেপ হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের জন্য নতুন করে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গাজায় বন্দী ওমের শেম তোভের স্বজন দুদি জালমানোভিচ বিবিসিকে বলেন, ‘এই বিবৃতি ও ঘোষণার প্রতিটিই হামাসকে আরও একরোখা করে তুলছে। তিনি (ট্রাম্প) কম সক্রিয়তা দেখালে আমার ভালো লাগবে।’

 

জিম্মি মুক্তি বিলম্ব করা নিয়ে হামাস যে ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে ইসরায়েলেরও সন্দেহ রয়েছে। সপ্তাহান্তে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা দেখে তাদের মধ্যে এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে, এখনো মুক্তি না পাওয়া বাকিদের অবস্থা আরও খারাপ। এই অবস্থা বিশ্ববাসী দেখুক, তা হয়তো হামাস চায় না। এদিকে টেলিভিশনের সম্প্রচারিত ভিডিওতে দিনদুপুরে সশস্ত্র হামাস যোদ্ধাদের কুচকাওয়াজ করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও বলেছিলেন, সংঘাতের সময় হামাস যে পরিমাণ যোদ্ধা হারিয়েছে, তা আবার সংগ্রহ করেছে। এ থেকে অনেক ইসরায়েলি মনে করেন, এই যুদ্ধবিরতি টিকবে না বা টেকা উচিত হবে না।

 

 

যা–ই হোক, এত আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে হওয়া এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি যে অকার্যকর হতে যাচ্ছে, তা এত শিগগিরই বলার সুযোগ নেই। অনেকে অনুমান করছেন, চুক্তিটি হয়তো ভেঙে যাবে। তবে এটা সত্য, ইতিবাচকভাবে শুরুর পর বর্তমানে চুক্তিটি ঘিরে অচলাবস্থা দিন দিন বাড়ছে।