ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হলেও গাজা নিয়ে শঙ্কা
কেরি বয়েব অ্যান্ডারসন সূত্র : সমকাল, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন বছর সব সময় নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা শুরুতেই দুটি যুদ্ধের মুখোমুখি হবেন– ইউক্রেন ও গাজা। এ দুটি যুদ্ধ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসনকে সংকটে ফেলেছে। তবে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি খুব দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। ট্রাম্প এবং তাঁর কিছু শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা বিষয়ে এক ধরনের বিরোধিতাই করেছেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে গেলে খুব সম্ভবত ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা একেবারে কমে যাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কিথ কেলগকে তাঁর যুদ্ধবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কেলগ ইউক্রেনকে আলোচনায় বাধ্য করার জন্য সহায়তা বন্ধ করার হুমকি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ এখনই না দেওয়া এবং মস্কোকে আলোচনায় রাজি করাতে নিষেধাজ্ঞা কমানোর চিন্তাও করছেন। এভাবে ইউক্রেন রাশিয়ার তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল অবস্থানে থাকবে, যা যুদ্ধ সমাপ্তির আলোচনার জন্যও সহায়ক হবে। শর্তগুলো সম্ভবত মস্কোর চেয়ে কিয়েভের জন্য বেশি হতাশাজনক হবে।
প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, ট্রাম্পের বিশেষ চ্যালেঞ্জ হবে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা। ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের অঙ্গীকারে যে ঘাটতি আছে, তা তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই বলেছেন। ফলে নতুন মেয়াদে ট্রাম্পের জন্য ন্যাটো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে। অথচ বাইডেনের সময় ন্যাটো নতুন সদস্য গ্রহণ করে বিশেষ শক্তি অর্জন করেছিল। যদিও জোটে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা যেমন দেখা যায়, তেমনি রাশিয়া থেকে একাধিকবার হুমকিরও শিকার হয় ন্যাটো। প্রতিরক্ষা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্ত থাকা এবং স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যারা বৃহত্তর ইউরোপে কাজ করছেন, তারা আশা করছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের প্রচেষ্টা ভিন্ন গতি পাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও গাজা যুদ্ধ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টারা প্রায় সবাই কঠিন ইসরায়েলপন্থি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে মনোনীত করেছেন। রুবিও সম্প্রতি লিখেছেন, ‘ইসরায়েলিদের তাদের ঐতিহাসিক জন্মভূমিতে বসবাস করা শান্তির প্রতিবন্ধক নয়। শান্তির প্রতিবন্ধক হলো ফিলিস্তিনিরা।’ ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের পছন্দ মাইক হাকাবি। তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিম তীর বলে কিছু নেই। এটি জুডিয়া এবং সামারিয়া এবং এখানে (ইসরায়েলি) দখল বলে কিছু নেই।’ ট্রাম্পের নির্বাচিত অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পররাষ্ট্র কর্মকর্তার অনুভূতিও ভিন্ন নয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্প প্রশাসনে আরও বেশি সমর্থন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং গাজা বা পশ্চিম তীরের ব্যাপারে ট্রাম্প নতুন প্রশাসন থেকে তেমন চাপ আসবে বলে মনে হয় না।
তবে গাজা যুদ্ধ চলমান থাকলে অন্যান্য আঞ্চলিক সংঘাত বাড়বে, যা ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্রমাগত ঝুঁকির মুখোমুখি করবে। এমনকি যদি হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের শপথ পর্যন্ত থাকে, তার পরও নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসনও ইয়েমেনি হুতিদের আক্রমণে সংকটে রয়েছে এবং ট্রাম্পকেও সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনে ইসরায়েলপন্থিরা ইরানের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এর মধ্যে ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নিতে সংযত থাকার জন্য কম চাপ দেওয়াও এর অন্যতম কারণ। ট্রাম্পের অনেক শীর্ষস্থানীয় পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইরানের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করেন। তবে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চাইছেন না, যাতে মার্কিন সেনারা যুক্ত হয়ে পড়ে। আমেরিকানদের জীবন ও তহবিলের খুব বেশি খরচ হয় এমন যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হওয়া তিনি এড়াতে চাইবেন। যদিও কিছু উপদেষ্টা তাঁর ইচ্ছার প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়াতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদ ভিন্ন হবে নানাভাবেই। যেমনটি ইতোমধ্যে তাঁর উপদেষ্টা নির্বাচন দ্বারা প্রমাণিত। ২০২৫ সালে বৈদেশিক নীতির চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি ২০২৪ এবং সম্ভবত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ও তাঁর পদ্ধতির থেকেও উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা হবে। তার প্রভাব ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধেও দেখা যাবে।
কেরি বয়েব অ্যান্ডারসন: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক
ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ; আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত
ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক