কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ট্রাম্পের শুল্কারোপ : অর্থনীতির সাথে রাজনীতি

ট্রাম্পের শুল্কারোপ স্থায়ী নাও হতে পারে। গ্রিনল্যান্ড, মেক্সিকো উপসাগর প্রভৃতি ব্যাপারে দেখা গেছে, ট্রাম্প যা বলেন তা করেন। বিশ্ব জনমত ঠেলে গাজাকে শেষ করে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এ জন্য ট্রাম্পের শুল্কারোপ ভয়ের কারণ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য-মীযানুল করীম। সূত্র : নয়া দিগন্ত, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্কারোপ : অর্থনীতির সাথে রাজনীতি

শুল্ক অর্থনৈতিক ব্যাপার। কিন্তু ট্রাম্পের হাতে পড়ে এটা রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ পুরো রাজনৈতিক ব্যাপার। তিনি আসলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চীনকে নিশানা করে এর ছক কষেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। বাণিজ্যের সংস্কার চলতে থাকবে। শি জিন পিং আরো বলেছেন, সংস্কার বাদে কেউ জয়ী হন না।

 

আমাদের দেশে আগে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান একই বিষয় হিসেবে পড়ানো হতো। তখন নাম ছিল ‘অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিজ্ঞান।’ জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৭ সালের পর এ বিভাগকে আর আগের নামে ডাকা হয় না। ‘অর্থনীতি’ আলাদা বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে বর্ধিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ট্রাম্প গাজার যুদ্ধ এবং চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত শুল্ক আরোপ করেন অনেক দেশের ওপর। এর মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং বাংলাদেশসহ আরো রাষ্ট্র রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিল, গত ৯ এপ্রিল তা স্থগিত রাখা হয়েছে। ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এ ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ সময় দেশগুলোর পণ্যে পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করে গত ৭ তারিখে ট্রাম্পকে চিঠি দেন ড. ইউনূস। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক সুবিধা দেয়ার কথাও বলেন। এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রফতানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন।

 

এ শুল্ক আরোপ ৯০ দিন স্থগিতের ঘোষণা আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন দেশের পোশাক রফতানিকারকরা। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ৯০ দিনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কতটা কার্যকরভাবে দরকষাকষি করতে পারছে, এর ওপর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা ১০৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক বাজারের ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। দেশটিতে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে আমেরিকায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ।

 

পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন বলেন, এ বিরতি বাংলাদেশকে প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় দিচ্ছে। চীন শুল্কের মুখে পড়ায় ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে। ৯০ দিনের বিরতিতে আপাতত স্বস্তি পাওয়া গেলেও কিছু উদ্বেগ থেকে যায়। কারণ ট্রাম্প ঘোষিত শুল্ক ৯০ দিন পর কার্যকর হলে দেশের ৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প সঙ্কটে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিকারকদের ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হবে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পরপর বাংলাদেশের তৈরী পোশাক, চামড়া পণ্যসহ রফতানিকারকরা মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশ পাচ্ছিলেন। ক্রেতাদের একটা অংশ বাড়তি শুল্কের লোকসান কমাতে মূল্যছাড় দাবি করছিলেন। এমনকি পণ্য জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) পিছিয়ে দিতে বলছিল কোনো কোনো মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রামের ড্রেস কিং নামের পোশাক কারখানা গত বছর ৫৬ লাখ তৈরী পোশাক রফতানি করে। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য রফতানির ৬০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা শুল্ক আরোপের পর মার্কিন ক্রেতারা প্রতিষ্ঠানটির কাছে মূল্যছাড় দাবি করছিল। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখতে বলেছে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। কিছু ক্রয়াদেশের মূল্যছাড়ও চাইছে ক্রেতারা। অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সরকারের উচিত মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে নিবিড় আলোচনা করা। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এক বিদেশী ক্রেতা আগের কার্যাদেশ অর্ধেকে এনেছেন।

 

দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্য আমদানিতে শুল্ক সুবিধা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারকে চিঠি দিয়েছেন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। এর আগে বিভিন্ন দেশ মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে পাল্টা শুল্ক স্থগিত করার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এ ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন। একই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলেন, বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য। বাংলাদেশের ট্যারিফ লাইনের আরো ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।

 

এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানিবাজার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭৬০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা দেশের মোট রফতানি আয়ের ১৭ শতাংশের কিছু বেশি। রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া বাংলাদেশী পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরী পোশাক। রয়েছে মাথার টুপি, চামড়ার জুতা, হোমটেক্সটাইল, পরচুলা ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানি করে দুই হাজার ৩২৬টি প্রতিষ্ঠান; যার মধ্যে ৯৫৭টির মোট রফতানির এক-চতুর্থাংশের বেশি পণ্যের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ কমলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়ত।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্বের সব দেশ এত দিন যুক্তরাষ্ট্রকে লুটপাট করেছে, এখন থেকে তা আর হতে দেয়া হবে না। ২ এপ্রিল প্রায় সব দেশের পণ্যের পাল্টা শুল্ক আরোপ করে সেই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্কতাবার্তা দিয়েছেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যারা ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে শুল্কমুক্ত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূর করার পক্ষেও অবস্থান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের জবাবে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে চীন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দেশটি। নতুন করে ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন। যুক্তরাজ্যের ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক আরোপে যুক্তরাজ্যের উদগ্রীব হওয়া উচিত হবে না। আমরা আলোচনার পথও খোলা রেখেছি। সম্ভাব্য পাল্টা শুল্ক আরোপে ‘প্রস্তুতিমূলক কাজ’ করা হয়েছে।’ যুক্তরাজ্যের অন্যতম গাড়ি কোম্পানি আগুয়ার ল্যান্ড রোভার এক মাসের জন্য আমেরিকায় গাড়ি রফতানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে এগিয়ে ভারত। বাজেটে বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করেছে ভারত। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, যেমন কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরিতে আরো শুল্ক হ্রাসরে প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে রাজি হতে পারে ভারত। ২৬ মার্চ শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বাদীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ভারত সফরে আসার পর শুল্ক প্রশ্নে নমনীয় বার্তা দেয়া হয়।

 

ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ভিয়েতনাম জানিয়েছিল, এ বিষয়ে তারা আলোচনা চায়। এর জন্য ১-৩ মাস চায়। এ কয়েক মাস তাদের চড়া শুল্কের হাত থেকে নিস্তার দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক টু ল্যামের সাথে কথা বলার পর ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি বিনিময়ে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানির শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়। ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, আরো বেশি মার্কিন পণ্য আমদানির জন্য ব্যবস্থা নেবে তারা। মার্কিন কোম্পানিগুলো যেন সহজে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে পারে। চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে কানাডা। মেক্সিকো তা করেনি। সমঝোতার চেষ্টা করছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়া। ছাড়ের প্রস্তাব দেয়া দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম ও ভারত ছাড়াও রয়েছে তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ইসরাইল।

 

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ গভীর করে কয়েক ডজন দেশের ওপর চাপানো ট্রাম্পের ‘পাল্টা’ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। বিশ্বজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে দরপতন হচ্ছে। মন্দা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসএন্ডপি ৫০০ শেয়ারবাজার ছয় লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। এ সূচক এখন একটি ‘বেয়ার মার্কে’ এর দিকে এগোচ্ছে, যা সর্বশেষ উচ্চতা থেকে ২০ শতাংশ নিম্ন অবস্থান নির্দেশ করে। এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোতেও দরপতন হয়েছে। এসব শুল্ক দীর্ঘসময় ধরে বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মিশ্র ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। আরোপিত শুল্কগুলো ‘স্থায়ী’ বলে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু এ পদক্ষেপের কারণে বহু দেশের নেতা আলোচনার জন্য দেনদরবার করছেন বলে ট্রাম্প গর্ব করে জানিয়েছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বণিজ্যযুদ্ধ আরো সঙ্কটের দিকে মোড় নিয়েছে। ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে বেইজিং, যুক্তরাষ্ট্রের দফায় দফায় শুল্ক বৃদ্ধির মুখে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কড়া ভাষায় জানিয়েছে, শেষ অবধি লড়াই করে যাবে। দেশটিতে হলিউড চলচ্চিত্র আমদানির নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি) জানিয়েছে, শুল্কযুদ্ধে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৩ থেকে ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈশ্বিক জিডিপি কমতে পারে ০.৭ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সংস্থার পরিচালক রেবেকা গ্রিনস্প্যান বলেছেন, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব’ ফেলতে পারে, যার কারণে দেশগুলো বিদেশী সহায়তা বন্ধের চেয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে।’

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাল্টা শুল্ক বা রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। ফিরতে শুরু করেছে স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ। ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বহাল থাকায় অনিশ্চয়তাও রয়েছে। রফতানিকারকদের মতে, নতুন শুল্কের বিষয়ে ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কম দিতে পারে। আবার দরকষাকষি করে প্রতিযোগী কোনো দেশ শুল্ক কমাতে পারলে তারা ব্যবসা নেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

 

ট্রাম্পের শুল্কারোপ স্থায়ী নাও হতে পারে। গ্রিনল্যান্ড, মেক্সিকো উপসাগর প্রভৃতি ব্যাপারে দেখা গেছে, ট্রাম্প যা বলেন তা করেন। বিশ্ব জনমত ঠেলে গাজাকে শেষ করে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এ জন্য ট্রাম্পের শুল্কারোপ ভয়ের কারণ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য।