ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ব অর্থনীতি
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পাশাপাশি কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও পরে তা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন তিনি। আলোচনার সুযোগ দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্য ইস্যুর মতো বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ট্রাম্পের এই আচরণ অস্বাভাবিক কিছু না হলেও তা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে একটি বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করলেও তিনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, ‘এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে! এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়, তা দিতে হবে।’ সত্যি সত্যিই ৩ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের শুল্কনীতির কিছুটা মূল্য চুকায় বিশ্ব। এদিন বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধস নামে, তেলের দাম বেড়ে যায় এবং ডলারের বিপরীতে বেশির ভাগ মুদ্রার দরপতন হয়। কিন্তু পরে যখন ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন, তখন বাজার ফের স্থিতিশীল হয়।
এই ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের অনিশ্চয়তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্প শেয়ারবাজারের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন এবং তা বিবেচনায় রেখেই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন।
ফলে ভবিষ্যতে এমন পদক্ষেপ আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শুধু বিশ্ব অর্থনীতি নয়, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে। কানাডা ও মেক্সিকোতে উৎপাদিত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একাধিকবার সীমান্ত পার হয়ে চূড়ান্তভাবে একত্র হয়। ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে উৎপাদন ব্যয় এতটাই বেড়ে যাবে যে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্টেলান্টিস, জেনারেল মোটরস ও ফোর্ড লাভজনক থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বার্কলেস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটলে ছোট কম্পানিগুলো টিকে থাকতে পারবে না এবং অনেক উৎপাদন ইউনিট বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, ট্রাম্পের এ ধরনের নীতির ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামীতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়বে। একদিকে তারা কানাডা ও মেক্সিকোতে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছে না, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও বড় ধরনের প্রকল্প চালু করার আগে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলা ঠিক থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে ২০১৮ সালে দেশটির বিনিয়োগ কমপক্ষে ১ শতাংশ কমে যায়। এবার ট্রাম্পের পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত এবং এতে আরো বেশি দেশ ও শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প তার শুল্কনীতির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে, কমতে পারে বিনিয়োগও।