উদ্ভট পরিসংখ্যানের পিঠে চড়েছে দেশের অর্থনীতি
২০১৮ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও বাড়েনি বিদ্যুতের ভোগ -মেহেদী হাসান রাহাত ও আবু তাহের। [সূত্র : বণিক বার্তা, ০৭ মে ২০২৫]

বিদ্যুতের ভোগ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মধ্যে বেশ দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে বিদ্যুতের ভোগও বাড়ে, বিশেষ করে শিল্প ও কৃষি খাতে।
বিদ্যুতের ভোগ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মধ্যে বেশ দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে বিদ্যুতের ভোগও বাড়ে, বিশেষ করে শিল্প ও কৃষি খাতে। এর কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে তা শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদাকেও বাড়িয়ে দেয়। যদিও স্বতঃসিদ্ধ এ নিয়ম বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো হয়। এখানে বিদ্যুতের ভোগ কমে গেলেও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে দেখা গেছে। ২০১৮ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ ছিল দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক, যদিও এ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভোগ বাড়া সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার নজির রয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ বেড়েছে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিপরীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এ উদ্ভট চিত্র দেশের তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০’ প্রণয়ন করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে মহাপরিকল্পনায় প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ার প্রাক্কলন করা হয়। দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতেরও বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে—এ বিবেচনায় বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৯০টির বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়। বিশেষ আইনের আওতায় এসব কেন্দ্রের দায়িত্ব পায় তৎকালীন সরকারের পছন্দের লোকেরা। যদিও বিদ্যুতের চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। উল্টো বছরের বেশির ভাগ সময় কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে সরকারকে। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা না হওয়ায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে আর্থিকভাবে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুসারে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ৮২৩ মেগাওয়াট। এ বছরের মার্চ শেষে এ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াটে। এর বাইরে আরো প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। গত দেড় দশকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৫ গুণ। বিপুল পরিমাণ এ সক্ষমতার বিপরীতে এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট, গত বছরের ৩০ এপ্রিল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের শিল্প খাতে বিদ্যুৎ চাহিদার যে সামঞ্জস্যতা সেটি ওই অর্থে হয়নি। সাধারণত জিডিপির প্রবৃদ্ধি যে হারে হয়, এনার্জি প্রবৃদ্ধিও সে হারে হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখন সেটি দেখতে পাই না। তবে প্রডাক্টিভিটি ও এনার্জি এফিশিয়েন্সি বেড়েছে। জ্বালানি প্রবৃদ্ধি হয়তো সরাসরি বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে হয়নি, তবে ক্ষুদ্র শিল্পে কিন্তু হয়েছে।’
বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়েও মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক অবস্থান ১২২তম। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক দিয়ে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের নিচে বাংলাদেশের অবস্থান।
ফ্রান্সভিত্তিক স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনারডাটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎ ও জলবায়ুসংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের ভোগ বেড়েছে ৩ শতাংশ হারে, যা এ সময়ের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় অর্ধেক। ওই সময়ের তুলনায় ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে বিদ্যুতের ভোগ বেড়েছিল দ্বিগুণ হারে। আর ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে ভোগ বেড়েছে।
এদিকে দেশের অর্থনীতিতে গত দেড় দশকে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার। এ সময়ে দুয়েকবার ৬ শতাংশের নিচে নামলেও সার্বিকভাবে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ বিলিয়ন ডলারে। যদিও রফতানির সংশোধিত পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির আকার কিছুটা কমে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের জিডিপির প্রকৃত আকার ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ও উন্নয়নকে অতিরঞ্জিত করে দেখাতে গিয়ে বিগত সরকার দেশের জিডিপি পরিসংখ্যানকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে তা অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার বেশি দেখানো হয়েছে। এ তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর কারণ, যাতে সরকার বিদেশ থেকে বেশি ঋণ নিতে পারে এবং জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত অনেক নিচে থাকে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুতের ভোগের চেয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেশি হওয়ার মানে হলো বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার সামান্য বাড়লে জিডিপি অনেক বাড়ে। এটি হচ্ছে একটি দিক। এর বিপরীত আরেকটি দিক হচ্ছে জিডিপির অতিমূল্যায়ন। আমাদের ব্যয়ভিত্তিক পদ্ধতিতে জিডিপি হিসাব করা হয়। ফলে এখানে সরকার ঋণ করে যেসব ব্যয় করছে সেগুলোও জিডিপিতে চলে আসছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে প্রথম দিকে সরকারের ব্যয়ের যে পরিমাণ ব্যবহার হতো পরের দিকে এসে তার চেয়ে কম ব্যবহার হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতিমূল্যায়ন হয়েছে অনেক বেশি।’
সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেসের ‘ম্যাক্রো ইকোনমিক আউটলুক ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপির আকার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিপরীতে অর্থনৈতিক উৎপাদনের তুলনা করে প্রতিষ্ঠানটি জিডিপির এ হিসাব করেছে। বিপিডিবির তথ্যের বরাত দিয়ে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটালের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মাত্র ৯ কোটি ৬০ লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়েছে, যা আঞ্চলিক মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম। জিডিপির পরিমাণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এতে বলা হয়, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বাংলাদেশ কীভাবে ভারত, পাকিস্তান বা চীনের চেয়ে ৫০-৬০ শতাংশ বেশি অর্থনৈতিক উৎপাদন দেখাতে পারে?
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি, প্রতিবেশী দেশ এমনকি সমজাতীয় অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে জিডিপি অনেক বেশি মূল্য় সংযোজন হয়। বিশ্বব্যাংকের ডাটাবেজের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে বাংলাদেশের জিডিপিতে যোগ হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ ডলার। যেখানে একই সময়ে চীনের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭ দশমিক ৮, জার্মানি ১৯ দশমিক ৪, ভারতে ১২, জাপানে ১৪ দশমিক ৩, পাকিস্তানে ১১ দশমিক ৭, যুক্তরাজ্যে ২৩ দশমিক ৪, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ দশমিক ২ ও ভিয়েতনামে ১২ দশমিক ৬ ডলার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুতের ভোগের যে তথ্য আমরা দেখছি সেটিকে বেশি বাস্তব তথ্য বলে মনে হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য অতিরঞ্জনের সুযোগ কম। অন্যদিকে জিডিপির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে যে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের ভোগ বাড়ার পরিসংখ্যানে যে অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে, সেটি অতিরঞ্জিত পরিসংখ্যানের কারণে হতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে ধরনের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে, তার তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।’
সরকারের কাছ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ও যথাযথ লোডের বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ার কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা বিদ্যুতের জন্য ক্যাপটিভ কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে থাকেন। তারা বলছেন, দেশে গ্রিড লাইনের বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন নয়। যে কারণে শিল্প মালিকরা সরকারের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্পে ব্যবহার করেন। বিগত এক দশক শিল্প খাতে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা তিন হাজার মেগাওয়াটে স্থিতিশীল রয়েছে। এ সময়ে সরকার বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ালেও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্নতা না থাকায় শিল্প মালিকরা গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করেননি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার ওই অর্থে বাড়েনি। বরং গ্যাস সংকটের বিষয়টিকে সামনে এনে বিগত সময়ে শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও শিল্প খাতে বাড়েনি। তিনি মনে করেন, দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে প্রবৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে কত হয়েছে, সেটির সঠিক তথ্য-উপাত্ত জানা জরুরি। ব্যবসায়ীদের কাছে এ তথ্য থাকা প্রয়োজন। সরকারের উচিত এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে মূলত আবাসিক খাতে। অর্থাৎ দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, তার বেশির ভাগ আবাসিক খাতে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাও নগরায়ণের ক্ষেত্রে, দেশের বিভিন্ন শহর সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে। বিদ্যুতের চাহিদা শিল্প খাতে তেমন বাড়েনি। সে জন্য ২০১৭ সালের পর থেকে গ্রিডে বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়েনি বলে মনে করেন তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাধারণত একটি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ে একই হারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মূলত অবকাঠামোগত বিনিয়োগকে ভিত্তি করে। যে কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের প্রবৃদ্ধির প্রকৃতপক্ষে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এটা না হওয়ার মূল কারণ হলো দেশে শিল্প খাতে বিগত প্রায় এক দশকে প্রবৃদ্ধি হয়নি। অথচ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিটা বড় একটা ফ্যাক্টর।’
তিনি মনে করেন, ‘আমাদের দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রাক্কলন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দুটোই আলাদা করা দরকার। বেশির ভাগ দেশে বিদ্যুৎ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে একটা সম্পর্ক থাকে। যেটাকে বলা হয় জিডিপি ইলাস্ট্রিসিটি। যার মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার প্রাক্কলন করা হয়। বাংলাদেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট, ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হবে। এসব প্রাক্কলন জিডিপি ফ্যাক্টর দিয়ে করা। যেখানে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৮-৯ শতাংশ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।’