কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ভারী শিল্পের রাজধানী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড

চট্টগ্রামের এই উপজেলায় দুই শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ভারী শিল্পের কারখানা ১৫০টি। সেই হিসাবে এই উপজেলার প্রতি দুই বর্গকিলোমিটারে গড়ে একটি ভারী শিল্পের কারখানা গড়ে উঠেছে-মাসুদ মিলাদ ও শুভংকর কর্মকার । সূত্র : প্রথম আলো, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারী শিল্পের রাজধানী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড

পাহাড়ঘেরা সীতাকুণ্ডের ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চট্টগ্রাম শহর থেকে এই মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যেতে ডান পাশে একের পর এক ভারী শিল্প। যার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, রড, ঢেউটিন, ইস্পাত, কনটেইনার ডিপো, গাড়ি সংযোজন, কাচসহ ভারী শিল্পের বহু কারখানা। বাঁ পাশে সাগর উপকূলে তাকালে চোখে পড়ে পুরোনো জাহাজের ফানেল বা চিমনি। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। এলপি গ্যাসের একাধিক কারখানাও রয়েছে মহাসড়কের দুই পাশে। এত এত শিল্প এক উপজেলায়, যেন এটি ভারী শিল্পের রাজধানী।

 

 

চট্টগ্রাম থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ২৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় দুই শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ভারী শিল্পের অন্তত ১৫০টি কারখানার নাম পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে এই উপজেলার প্রতি দুই বর্গকিলোমিটারে গড়ে একটি করে ভারী শিল্পের কারখানা গড়ে উঠেছে।

 

 

সীতাকুণ্ডের একাধিক শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের খুব কাছে হওয়ায় সহজেই পণ্য আনা-নেওয়া করা যায় সীতাকুণ্ড উপজেলায়। আবার রয়েছে মহাসড়ক। তাতে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ঢাকাসহ সারা দেশে সহজে ও দ্রুত পরিবহন করা যায়। এই দুই সুবিধার কারণে ভারী শিল্প গড়ে তোলার জন্য উদ্যোক্তাদের মনোযোগ কেড়েছে সীতাকুণ্ড।

 

 

অবশ্য ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা নেই সীতাকুণ্ডে। তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে হাহাকারও আছে। খুব সহজে কাঁচামাল আনার সুবিধা থাকলেও উৎপাদিত পণ্য সারা দেশে সরবরাহে খরচ বেশি চট্টগ্রাম থেকে। কারণ, ছয় চাকার গাড়িতে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন যায় না। গ্লাস, ইস্পাতের মতো ভারী শিল্পে প্রচুর মিঠাপানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সীতাকুণ্ডের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের বিপুল অর্থ খরচ করে পানির বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজিও বড় সমস্যা উদ্যোক্তাদের জন্য।

 

 

এক উপজেলায় দেড় শ ভারী শিল্প

শিল্পনীতি ২০২২ অনুযায়ী, ভারী শিল্প বলতে এমন শিল্পপণ্যের উৎপাদনপ্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে বৃহৎ আকারের উদ্যোগ, বড় যন্ত্রপাতি, ভূমির বৃহৎ এলাকা, উচ্চ খরচ ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকবে। সেই হিসেবে জাহাজভাঙা, রড, ঢেউটিন ও ইস্পাত কারখানা, কাচ, সিমেন্ট, এলপিজি, পেট্রোলিয়াম প্রক্রিয়াজাতকরণ, মোটরগাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি কারখানা ভারী শিল্পের আওতায় রয়েছে।

 

 

সীতাকুণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডের দুই শতাধিক কারখানার অধিকাংশই ভারী শিল্প। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজভাঙা শিল্প ৭৫টি, রড-ঢেউটিনের ৪৩টি, এলপিজি ৯টি, বস্ত্রকল ৫টি, পেট্রোলিয়াম পরিশোধন ৪টি, সিমেন্ট ৩টি, গাড়ি সংযোজন ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন কারখানা ৩টি, গ্লাস ও টাইলসের একটি করে মোট ২টি কারখানা রয়েছে। এর বাইরে অক্সিজেন ও অন্যান্য গ্যাস উৎপাদনের ১০টি, পোলট্রি খাতের ১১টি ও ভোগ্যপণ্যের ৬টি কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি খাতে বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার লেনদেন করে, এমন শিল্প গ্রুপের সংখ্যা আট। শুধু সীতাকুণ্ডে কারখানা রয়েছে বিলিয়ন ডলার ক্লাবের তিনটি শিল্প গ্রুপের। শিল্প গ্রুপ তিনটি হলো—আবুল খায়ের, বিএসআরএম এবং টি কে গ্রুপ।

 

 

সীতাকুণ্ডের উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানার মধ্যে রয়েছে ইস্পাত খাতের পিএইচপি স্টিল কমপ্লেক্স, জিপিএইচ স্টিল মিলস, আবুল খালের স্টিল মিলস, আবুল খায়ের স্টিল মেল্ট্রিং মিলস, কেএসআরএম, বিএসআরএম স্টিল, কে আই ওয়াই স্টিল মিলস ইত্যাদি। আর সিমেন্ট কারখানার মধ্যে রয়েছে মোস্তফা হাকিম সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট ও রয়েল সিমেন্ট।

 

 

এ ছাড়া কাচশিল্পের মধ্যে পিএইচপি গ্লাস ফ্যাক্টরি, টাইলসে বিল্ড কম, অটোমোবাইলে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ও আফতাব অটোমোবাইল, পাটকলের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে গালফ্রা হাবিব, এলপি গ্যাস ও সিলিন্ডার খাতে টোটাল গ্যাস বাংলাদেশ, ওমেরা গ্যাস কোম্পানি, বিএমএলপি গ্যাস, ইউরো পেট্রো প্রোডাক্টস, ইউনিগ্যাস সিলিন্ডার, জেএমআই গ্যাস, পদ্মা গ্যাস, বসুন্ধরা গ্যাস এবং ইউনিভার্সেলের কারখানা রয়েছে। বস্ত্র খাতের কারখানার মধ্যে রয়েছে স্যানম্যান টেক্সটাইল, ডং বিং টেক্সটাইল, ইউনিটেক্স স্পিনিং, বেঙ্গল সিনথেটিক, ডিজিটাল অ্যাকসেসরিস ইত্যাদি।

 

  

সীতাকুণ্ডে চার-পাঁচটি জেটি করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে কম সময় ও খরচে কাঁচামাল কারখানায় আনা যাবে। এতে বন্দরের ওপর চাপ কমবে।

 

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান, জিপিএইচ গ্রুপ

এই উপজেলায় জাহাজভাঙা শিল্পের মধ্যে রয়েছে এইচ এম শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি, পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, এস এন করপোরেশন, কবির শিপ রিসাইক্লিং, কে আর শিপ রিসাইক্লিং, তাহের শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং, এনবি স্টিল, যমুনা শিপ ব্রেকার্স, ফোর স্টার শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, এস এইচ এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি।

 

 

রড-ঢেউটিনের বড় উৎস

ইস্পাত খাতের চারটি বৃহৎ কোম্পানির কারখানা রয়েছে সীতাকুণ্ডে। কোম্পানি চারটি হলো বিএসআরএম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, জিপিএইচ গ্রুপ ও কেএসআরএম গ্রুপ। এর বাইরে রয়েছে রড উৎপাদনের ৩৩টি সনাতন ও আধা স্বয়ংক্রিয় কারখানা। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ডের কারখানাগুলোর মোট রড উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ৬০ লাখ টন। তবে কাঁচামাল আমদানি ও কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক হিসাবে, গত বছর অন্তত ৩৩ লাখ টন রড উৎপাদন হয়েছে এসব কারখানায়, যা দেশের মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি।

 

 

রড ছাড়া সারা দেশের ঢেউটিনের কাঁচামাল ইস্পাতের পাত এবং ঢেউটিনের বড় অংশ আসে সীতাকুণ্ড থেকে। যেমন ঢেউটিনসহ ইস্পাতের আসবাব ও গৃহস্থালি পণ্য তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল পরিশোধিত ইস্পাত পাত তৈরির ছয়টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই সীতাকুণ্ডে। এগুলো হলো আবুল খায়ের, পিএইচপি, কেডিএস ও টি কে গ্রুপ। সব মিলিয়ে ঢেউটিন তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল ইস্পাত পাত তৈরির ৭০ শতাংশ সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত হচ্ছে। ঢেউটিনেও রয়েছে সীতাকুণ্ডের সিংহভাগ বাজার হিস্যা।

 

 

শীতলপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আধা কিলোমিটারের ভেতরে ৭৫০ একর জমিতে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং মিল গড়ে উঠেছে। গত ২৭ জানুয়ারি কারখানাটি ঘুরে দেখা যায়, স্ক্র্যাপ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসে (ইএএফ) বিলেট উৎপাদন হয়। তারপর সেই বিলেট থেকে হয় রড। নতুন রোলিং ইউনিটের কল্যাণে তাদের বার্ষিক রড উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ টন। যদিও তাদের বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা ২০ লাখ টন।

 

 

গত ২৮ জানুয়ারি সীতাকুণ্ডের মাদামবিবিরহাট এলাকায় আবুল খায়ের স্টিল প্রোডাক্টসের ঢেউটিন কারখানাও ঘুরে দেখি আমরা। ৩০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৬ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তাদের উৎপাদিত গরু মার্কা ঢেউটিন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারের শীর্ষ স্থান দখল করে আছে।

 

জাহাজভাঙার রমরমা আর নেই

বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্প আছে শুধু সীতাকুণ্ডে। আটকে পড়া একটি জাহাজ কাটার মাধ্যমে ১৯৬৫ সালে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। সীতাকুণ্ড উপকূলের সলিমপুর থেকে কুমিরা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল এই শিল্পের কাজকারবার। একসময় এখানে কমবেশি দেড় শতাধিক জাহাজভাঙা কারখানা থাকলেও এখন এই সংখ্যা কমেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৪১টি ইয়ার্ড পুরোনো জাহাজ আমদানি করেছে। অর্থাৎ সচল থাকা জাহাজভাঙা কারখানার সংখ্যা ৪১।

 

 

পানিসংকটের কারণে এই এলাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পানির সংকটে অনেক সময় কারখানাও বন্ধ রাখতে হয়। তাই পানি সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ দরকার।

মোহাম্মদ আমির হোসেন এমডি, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি

 

জাহাজভাঙা শিল্প ঘিরে সীতাকুণ্ডের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। একটি জাহাজ থেকে হাজারো পণ্য পাওয়া যায়। ইস্পাত খাতের কাঁচামাল থেকে শুরু করে আলপিন—সবই মেলে এই খাতে। শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য ঘিরে এখানে অসংখ্য দোকান ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রপ্তানিও হচ্ছে জাহাজভাঙা শিল্পের নানা পণ্য। অবশ্য পরিবেশদূষণসহ নানা কারণে এই খাতের রমরমা অবস্থা আর নেই। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই শিল্পে নিরাপদ পরিবেশ তৈরির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান সবুজ শিল্প বা গ্রিন ইয়ার্ড হিসেবে সনদ পেয়েছে।

 

 

প্রধান সমস্যা ‘পানির সংকট’

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার কাচ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন এক হাজার টন মিঠাপানি দরকার। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেখান থেকে পানি পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সাত মাস কারখানা চালু রাখতে পারে। বাকি সময় আশপাশের এলাকা থেকে ভাউজার (পানিবাহী বড় গাড়ি) করে পানি এনে ব্যবহার করা হয়। এতে পণ্য উৎপাদনে বাড়তি খরচ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির।

 

 

পিএইচপির ফ্লোট গ্লাস কারখানা ছাড়াও সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে অ্যালুমিনিয়ামের একটি কারখানা, কুমিরায় ঢেউটিনের দুটি এবং ইস্পাত পাত প্রক্রিয়াকরণের দুটি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানাকেও পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জানতে চাইলে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় সীতাকুণ্ড অঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোক্তাদের পছন্দের এলাকা। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কও প্রশস্ত হয়েছে। তবে পানিসংকটের কারণে এই এলাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পানির সংকটে অনেক সময় কারখানাও বন্ধ রাখতে হয়। তাই পানি সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ দরকার।

 

 

পিএইচপির মতো আবুল খায়ের, জিপিএইচ, কেএসআরএম, কেডিএস, টি কেসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের কারখানায় মিঠাপানি লাগে। দীর্ঘদিন পানিসংকটে ভোগার পর আবুল খায়ের ও জিপিএইচ ইস্পাত নিজ উদ্যোগে পাহাড়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বন্দোবস্ত করেছে। পানির সংকট দূর করতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি সরবরাহের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে সীতাকুণ্ডকেও যুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। এ নিয়ে সমন্বিত সমীক্ষা করারও কথা বলেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। যদিও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডে পানি দেওয়ার জন্য কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

 

 

পানি ছাড়া সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে চাঁদাবাজি নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না করলেও উদ্যোক্তারা বলছেন, চাঁদাবাজির কথা বললে বিপদে পড়তে হবে। সরকারের পটপরিবর্তনের পর অনেকগুলো গ্রুপ নানা অজুহাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন অনেকগুলো গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় চাঁদাবাজদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

 

 

গত ২৯ জানুয়ারি কুমিরা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেসে স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট উৎপাদন হচ্ছে। সেই বিলেট থেকে রড বানানো হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদনের পর ট্রাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে টনকে টন রড। 

 

 

জানতে চাইলে জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, মিরসরাই থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থাকা পাহাড়ে ছড়া আছে। সেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করলে সীতাকুণ্ডের শিল্পের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি খাতেও বিপ্লব ঘটবে। তার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডে চার-পাঁচটি জেটি করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে কম সময় ও খরচে কাঁচামাল কারখানায় আনা যাবে। এতে বন্দরের ওপর চাপ কমবে। একই সঙ্গে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন নৌপথে কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে। তাতে মহাসড়কের ওপর থেকেও চাপ কমে আসবে।