যুক্তরাষ্ট্র-ভেনিজুয়েলা উত্তেজনা এবং লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে প্রভাব
ড. মো. মোরশেদুল আলম [প্রকাশিত : জনকণ্ঠ, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫]

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে বিদ্যমান কোকেন কারখানা এবং মাদক পাচারের রুটগুলোতে হামলার পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন। পরিস্থিতির বাহ্যিক লক্ষণ বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত প্রদান করছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউরোপে মোতায়েন নৌবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক বিমানবাহিনীর রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপটিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। অঞ্চলটিতে এরই মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক মার্কিন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পেন্টাগনের প্রেস সচিব শন পার্নেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড স্ট্রাইক গ্রুপ এবং এর যুদ্ধবিমান ইউনিটের এমন পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলোকে ভেঙে দেওয়া এবং মাদক সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা। ভেনিজুয়েলায় সরকার উৎখাতে সম্ভাব্য মার্কিন প্রচেষ্টা নিয়ে জল্পনাকল্পনার মধ্যেই এ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি আরও বেশি জোরদার করেছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প সিআইএ’কে ভেনিজুয়েলায় গোপন সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। তাঁর এমন নির্দেশের ফলে খুব শীঘ্রই দেশটির ভূখণ্ডে হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ভেনিজুয়েলা শুধু একটা রাষ্ট্র নয়, সমগ্র লাতিন আমেরিকের ভবিষ্যতের দর্পণ।
এখানে যা ঘটবে, তার ছায়া কিউবা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়া পর্যন্ত পড়বে। ট্রাম্প মন্তব্য করেন, মাদক পাচার রোধে মার্কিন পদক্ষেপের ইতিবাচক ফলাফল পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়েও ট্রাম্প ইঙ্গিত প্রদান করে বলেন, মেক্সিকো ও কলম্বিয়া নিয়েও আমাদের সমস্যা ছিল। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে মাদক আসা এখন পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী দক্ষিণ আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পরিবহনের দাবি করা কমপক্ষে ২১টি জাহাজে গত দুই মাসে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এত প্রায় ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভেনিজুয়েলা সমগ্র দেশে নিয়মিত সামরিক ইউনিট ও বেসামরিক মিলিশিয়াদের একত্রিত করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিটার হেগসেথ এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমেরিকা আমাদের গোলার্ধ থেকে মাদক সন্ত্রাসীদের অপসারণের জন্য ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামক একটি নতুন মিশন আরম্ভ করবে। এই অভিযান আমাদের স্বদেশকে রক্ষা করবে। পশ্চিম গোলার্ধ আমেরিকার প্রতিবেশ। এর সুরক্ষার দায়িত্বও আমেরিকার বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং যুদ্ধ বিভাগ তা বাস্তবায়ন করছে। সাউদার্ন স্পিয়ার পরিচালনা করবে আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড। এই সাউদার্ন কমান্ড মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং তার আশপাশের সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র সিন পারলেন বলেন, সাউদার্ন কমান্ড এলাকায় মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এবং পশ্চিম গোলার্ধে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত ব্যক্তি ও কার্যকলাপ শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মন্তব্য করেন, ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর মতো কট্টরপন্থি নেতৃবৃন্দ যুদ্ধের দাবিতে এখনো সোচ্চার রয়েছে। হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে নিকোলা মাদুরো ক্ষমতায় আসেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং মাদুরো নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ২০২৫ সালে ৩য় বারের মতো ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরো শপথ গ্রহণ করেন। তবে বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনে মারিয়া কোরিনা মাচাদোর প্রার্থী এদমুন্দো গোনসালেস বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনটি স্বাধীন ও সুষ্ঠু হয়নি বলে সমালোচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র মাদুরোকে ভেনিজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে অবশ্য স্বীকৃতি প্রদান করেনি।
গত অক্টোবর মাসে মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বলছে, এটা গণতন্ত্রের বিজয়। কিন্তু মাদুরো বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ষড়যন্ত্রের পুরস্কার। মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরই ট্রাম্প প্রশাসন ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন বৃদ্ধি করতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে ভেনিজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক হামলার হালনাগাদ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। এসব পরিকল্পনার মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানার মতো বিকল্পও রাখা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দিলেও দেশটি থেকে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করতে কূটনৈতিক পথ পুরোপুর বন্ধ করেননি ট্রাম্প।
ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে স্থলভাগে সম্ভাব্য হামলা চালানোর বিষয়ে ট্রাম্প কঠোরভাবে বক্তব্য প্রদান করছেন। মার্কিন বাহিনীও আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাদকবাহী নৌকাগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদুরোকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবেই ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলা পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। মাদকবিরোধী এই অভিযান মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর ইউএনওডিসি’র তথ্যানুসারে, ভেনিজুয়েলা কোকেন উৎপাদনকারী দেশ নয়।
কোকেনের প্রধান উপাদান কোকো গাছের চাষ হয় মূলত কলম্বিয়া, পেরু ও বলিভিয়ায়। ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রকাশিত গত মার্চ মাসের প্রতিবেদনে কোকেন পাচারকারী দেশের তালিকায় ভেনিজুয়েলার নাম ছিল না। ইকুয়েডর, মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর নাম ছিল। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন ভেনিজুয়েলার মধ্য দিয়ে মাদক পাচার হয়। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ২০২০ সালে ফেডারেল আদালত মাদুরোকে নারকো সন্ত্রাস ও কোকেন আমদানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। মার্কো রুবিও বলেন, নিকোলা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে একজন মাদক পাচারকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিচার থেকে তিনি পলাতক ব্যক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এরইমধ্যে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌযানে হামলা চালিয়ে দুজন মাদক কারবারিকে হত্যা করেছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন। তবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। এর অংশ হিসেবে সেখানে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ও কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। একই বিষয়ে ভেনিজুয়েলা এবং কলম্বিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই হামলাগুলো নিয়ে আইনবিশেষজ্ঞ ও ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব অভিযান যুদ্ধবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সে বিষয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে উত্তেজনা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেনিজুয়েলার উপকূলের নিকটেই অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্র ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো তাদের সেনাবহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোস্টগার্ডের পরিবর্তে সমারিক বাহিনী এসব হামলা পরিচালনা করায় বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এমন সামরিক সমাবেশকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক এরিক ফার্নসওয়ার্থ বলেন, সেনা সমাবেশের মাত্রা ও গতি উভয় নিয়েই আমি বিস্মিত। এটা নজিরবিহীন। চলতি শতাব্দীতে এ অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক প্রস্তুতি। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর লাতিন আমেরিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আরও কঠিন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে যেসব রাষ্ট্র প্রভাবিত করছে, তারা যদি তা বন্ধ না করে; তাহলে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সাহায্য সব কিছুই বন্ধ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন নীতি গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তিনটি বিষয়। এগুলো হচ্ছে: অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, মাদক পাচার রোধ এবং ওই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধ করা। ট্রাম্পের চাওয়া লাতিন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রভাববলয়ে থাকুক। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতির কারণে ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকোসহ অনেক দেশ এখন বিকল্প বাজার ও রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য চীন এবং ইউরোপের সঙ্গ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়া থেকে উন্নতমানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘পান্তসির এফ-১’ ও ‘বুক-এম২ই’ নিচ্ছে ভেনিজুয়েলা। রাশিয়া একইসঙ্গে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে রাজি। এর মাধ্যমে ভেনিজুয়েলা প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করে যুক্তরাষ্ট্রকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে নিকোলাস মাদুরো। ক্যারিবীয় সাগরে যখন মার্কিনি বাহিনীর উসকানিমূলক সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে, রাশিয়া থেকে পাঠানো উন্নত অস্ত্র সরঞ্জাম তখন ভেনিজুয়েলায় পৌঁছেছে। এতে করে ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভাতেও মতবিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভেনিজুয়েলাকে দীর্ঘপাল্লার ‘কালিবর’ ক্রুজ মিসাইল এবং নতুন প্রজন্মের ‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টিও বিবেচনা করছে রাশিয়া। অস্ত্রগুলো ভেনিজুয়েলার কৌশলগত অবস্থানকে আমূল পাল্টে দিতেও সক্ষম। রাষ্ট্র দুটির প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির আওতায় এসব অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মন্তব্য করেছেন, ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাশিয়া দৃঢ়ভাবে পাশে থাকতে বদ্ধপরিকর। ইরান ভেনিজুয়েলাকে ড্রোন, প্রযুক্তি ও পরিশোধনাগার সুবিধা দিচ্ছে। চীন নিয়মিত ঋণ প্রদান করে এবং মাদুরোকে কূটনৈতিকভাবে রক্ষা করে আসছে।
কিউবাও বহু বছর ধরে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করবে। এদিকে আবার ট্রাম্প প্রশাসন বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড’, পারমাণবিক সাবমেরিন এবং মার্কিন রণতরী মোতায়েন করে সমগ্র অঞ্চলে নিজেদের সর্ববৃহৎ সামরিক উপস্থিতি প্রদর্শন করছে। রাশিয়াসহ লাতিন আমেরিকার প্রতিরোধ অক্ষ নিজেদের প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অবস্থানকে গভীর সংকটে পতিত করেছে।
ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে ট্রাম্প বলেন, কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না করলেও তিনি বিদেশে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যেতে পারবেন। স্থলভাগে কোনো হামলা চালানোর প্রয়োজন হলে তিনি কংগ্রেসকে জানাবেন বলেছেন। কংগ্রেস এজন্য কোনো বিরোধিতা করবে এমন তিনি মনে করেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ানোর নীল নকশা করছেন বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। অথচ তারা আর কখনো যুদ্ধে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন তারাই যুদ্ধের একটি নীল নকশা আঁকছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা। গত আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন মাদুরোর গ্রেপ্তারের তথ্য প্রদান করলে পুরস্কার দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ৫ কোটি ডলার ঘোষণা করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে মাদুরোর সঙ্গে মাদক পাচার ও অপরাধী চক্রের যোগসাজশ রয়েছে; যা মাদুরো অস্বীকার করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে মাদুরোর নেতৃত্বে প্রশাসন দেশটির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টি প্রতিহত করে আসছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক হস্তক্ষেপেরও নিন্দা করে আসছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৈশি^ক অবস্থানের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে মার্কিন কোম্পানিগুলো আবার সেখানে ফিরতে পারবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ পূর্বের তুলনায় আরও নিরাপদ হবে। তাছাড়া গত এক দশকে ভেনিজুয়েলার প্রায় ৭৮ লাখ নাগরিক দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আধুনিক লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট। আবার তাদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি। দ্বিতীয় মেয়াদে তাই মাদুরোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ভেনিজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক উইলিয়াম সাব মন্তব্য করেন, ট্রাম্প ভেনিজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশে পরিণত করতে চান।
ভেনিজুয়েলার সরকার পরিবর্তনের ডাক দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ স্বর্ণ, তেল ও তামার মজুত কবজা করার একটি অজুহাত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ট্রাম্প একাধিকবার ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বললেও তিনি বলছেন সমুদ্র এখন নিয়ন্ত্রণে। তাই যুক্তরাষ্ট্র এখন ভূমি নিয়েও ভাবছে। মাদুরো সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ লাতিন আমেরিকায় আরেকটি গাজা, নতুন আফগানিস্তান বা আবার ভিয়েতনাম পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়