কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামার ইতিবৃত্ত

ড. মাহফুজ পারভেজ [সূত্র : যুগান্তর, ১৬ জুন ২০২৫]

যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামার ইতিবৃত্ত

২০২৫ সালের জুনের প্রথমার্ধে পুরো বিশ্ব দেখেছে কীভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র লস অ্যাঞ্জেলেস জ্বলছিল। যখন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) ‘অবৈধ’ অভিবাসী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায়, তখন দাঙ্গা-হাঙ্গামা ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোথাও কোথাও শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কারফিউ জারি করতে হয়। আসল ঘটনা হলো, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের উসকানিমূলক ভাষা তার শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান সমর্থকদের একটি বিশাল অংশের মন জয় করলেও অন্যান্য সম্প্রদায়কে ঠেলে দিয়েছে বিপদ ও ক্ষোভের চূড়ান্ত প্রান্তে আর সামনে নিয়ে এসেছে দেশটির জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামার ইতিবৃত্ত।

 

 

একাধিক মিডিয়া জানিয়েছে, জুনের প্রথম দিকের রাতগুলো থেকেই লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দারা আতঙ্কের গন্ধ পেয়েছিলেন। তাদের কাছে মনে হয়েছিল, অনতিদূরের পাহাড় ও বনানীর মাথায় জমাটবদ্ধ হালকা কুয়াশা বাতাসে মিশে তাদের দিকে ভাসিয়ে আনছে ভীতি ও নৈরাজ্য। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাংশে পর্যাপ্ত সেনা উপস্থিতি না থাকায় রাজ্যের নতুন অ্যাংলো-আমেরিকান শাসকরা আশঙ্কা করছিলেন, মেক্সিকানরা বিদ্রোহ করে নিজেদের মাতৃভূমির সঙ্গে আবারও একীভূত হতে চাইবে। অতীতের মতো গভীর রাতে, মাতাল যুবক হিস্পানিকরা ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় দৌড়ে বেড়াবে এবং বিদ্রোহের ঘোষণা করবে। বয়স্ক হিস্পানিকরা গল্প করত, কীভাবে তারা অজনপ্রিয় গভর্নরদের উৎখাতের চেষ্টা করেছিল। নতুন অ্যাংলো-আমেরিকান শাসকরা বিদ্রোহী অতীতের ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক কারণে ছিলেন উদ্বিগ্ন।

 

 

যুক্তরাষ্ট্র বিরাট দেশ হলেও সেখানে নানা জাতির বসবাস। সেসব জাতির মধ্যে মৈত্রীর পাশাপাশি রয়েছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। একথা সত্য, প্রতিটি সমাজ ও জাতির জন্য কিছু আলোচনা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। যেমন, কে সত্যিকার অর্থে এ সমাজের অংশ দাবি করতে পারে, আর কে থেকে যায় প্রান্তে? কার মূল্যবোধ ও বিশ্বাস প্রধান হয়ে উঠবে? প্রতিটি শহর, প্রতিটি সম্প্রদায়, প্রতিটি জাতির কাছে এসব প্রশ্ন বিভাজন তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রেও করেছে। আবার যখন উগ্র জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতায় এসেছে, তখন এসব অপ্রীতিকর আলোচনা ও বিতর্ক প্রাধান্য পেয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় আক্রান্ত লস অ্যাঞ্জেলেসের ঘটনাতেও তেমন ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন, মেক্সিকো, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ের পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভকারীরা সমাজে নিজেদের পরিচিতি, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দাবি করছে। সমাজের মূলস্রোত থেকে তাদের হটিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ঐক্যের পাশাপাশি বিভেদের চিত্রটি কম বড় নয়। সাদা-কালো, শ্বেতাঙ্গ-অভিবাসী ইত্যাদি নানা জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে সৃষ্ট বিভাজনে বারবার বিপন্ন হয়েছে দেশটি। যার সূত্র ধরে দাঙ্গার ঘটনাও সে দেশে নতুন কিছু নয়। প্রতিটি দাঙ্গা সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে অস্বস্তিকর বিতর্ক ও বিভেদ তৈরি করেছে। প্রায় প্রতিবারই দাঙ্গা নতুন নিয়ম, নতুন সমঝোতা এবং নতুন ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি দাঙ্গাই একটি বেদনাদায়ক সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ ছিল, যেখানে পরীক্ষা করা হয়েছিল-কে নাগরিক হিসাবে নিজেকে দাবি করতে পারে, কে একটি সংস্কৃতির পূর্ণ অংশীদার এবং কে সেই সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে এবং কে এসব সুযোগ ও অধিকার পাবে না। গণতান্ত্রিব ব্যবস্থার মধ্যে বিষবৃক্ষের মতো বিরাজমান জাতিগত বিভেদ এমন এক বিকৃতি, যা যুক্তরাষ্ট্র বারবার আড়াল করার চেষ্টা করেও পারেনি। ইতিহাস অন্তত এমন কথাই বলছে। যেমন, ১৮৫৬ সালের ১৯ জুলাই, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা একটি বকেয়া ঋণ আদায়ের জন্য আন্তোনিও রুইজ এবং সেনোরা মারিয়া ক্যান্ডেলারিয়া পোলোরেনার কাছ থেকে একটি গিটার ও অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দ করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে এবং রুইজের বুকে গুলি লাগে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। পরে একটি বিচার হয়, যেখানে সম্পূর্ণ শ্বেতাঙ্গ জুরি শ্বেতাঙ্গ খুনিকে নির্দোষ ঘোষণা করে। তখন, কয়েক দিন ধরে হিস্পানিক নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দল স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে দাঙ্গা ধীরে ধীরে থেমে যায়। প্রভাবশালী হিস্পানিক নেতারা বুঝতে পারেন, এ বিশৃঙ্খলা লস অ্যাঞ্জেলেসে তাদের মর্যাদাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

 

 

১৮৫৬ সালের সংকট প্রশমিত হতে না হতেই, আরেকটি নতুন সংকট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হাজার হাজার জাতিগত-চীনা অভিবাসী শ্রমিক শহরে প্রবেশ করতে থাকে এবং তারা Calle de Los Negros-এ এক কক্ষে সাতজন করে গাদাগাদি করে থাকতে শুরু করে। The New York Times লিখেছিল : ‘দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও অ্যারিজোনার সব অঞ্চল থেকে খুনি, ঘোড়াচোর, ডাকাত, চোর ইত্যাদি এখানে এসে জড়ো হয়। স্থানীয় বেশ্যাবাড়িগুলোর একটি সম্পূর্ণ ব্লকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তারা দখল করে নিয়েছিল।’

 

 

১৮৭১ সালের শেষদিকে Calle de Los Negros-এ দুটি চীনা অপরাধচক্র-হাও চৌ এবং নিন ইয়াং-একটি বন্দুকযুদ্ধ শুরু করে। এর জবাবে হিস্পানিক ও শ্বেতাঙ্গ বাসিন্দারা তীব্র প্রতিশোধ নেয়। সেসব সংঘাতের বিশ্লেষক-গবেষক, ইতিহাসবিদ স্কট জেসচ লিখেছেন, পাঁচ শতাধিক চীনা নাগরিককে রাস্তায় টেনে এনে গুলি করা হয়, ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং মারধর করে হত্যা করা হয় উন্মত্ত জনতার ইচ্ছায়। জনতা রাস্তায় ও ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেচে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আরও চীনা নিয়ে এসো ছেলেরা, দেশীয় পণ্যকে সমর্থন করো।’

 

 

এ জাতিগত দাঙ্গার পরিস্থিতিতে আমেরিকান বিচারব্যবস্থা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হিমশিম খাচ্ছিল: আইন প্রতিষ্ঠিত না হলেও নিরপেক্ষতা বা শৃঙ্খলা কিছুটা বজায় রাখত গণবিচার বা ‘ভিজিলান্টি’ বিচারব্যবস্থা। ‘অ্যাঞ্জেল সিটির আমেরিকানরা মজা করার জন্য কোনো হতভাগা মেক্সিকানকে ফাঁসিতে ঝোলানোর অভ্যাস করেছিল আর মেক্সিকানরা দেখাতে চেয়েছিল তারা চাইলে একই কাজ করতে পারে, তাই তারা প্রতিপক্ষের কাউকে সেই প্রদর্শনের উপযুক্ত বলি হিসাবে বেছে নিয়েছিল।’ এভাবেই চলেছিল পালটাপালটি আক্রোশের প্রদর্শনী।

 

 

১৯৪৩ সালের গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল গ্রামীণ জনপদ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক সৈনিক লস অ্যাঞ্জেলেসের জটিল সংস্কৃতির সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়। সেই বছরের জুন মাসে শত শত সৈনিক ইস্ট লস অ্যাঞ্জেলেস ও শহরের কেন্দ্রস্থলে তাণ্ডব চালায়, যেখানে তারা ফ্যাশনেবল তরুণদের-যারা ছিল স্থানীয় প্রতিসংস্কৃতির অংশ-আক্রমণ করে বেদম পেটাতে থাকে। রাস্তার ট্রাম থামিয়ে মেক্সিকান, এমনকি কিছু ফিলিপিনো ও আফ্রিকান-আমেরিকানকে আসন থেকে টেনে নামিয়ে বিকৃত উন্মাদনার সঙ্গে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারা হয়। জাতিগত দাঙ্গার ইতিহাসবিদ রিচার্ড গ্রিসওল্ড ডেল কাস্তিয়ো এ তথ্য সমর্থন করে লেখেন, পুলিশ ওই হামলাকারীদের পক্ষেই ছিল।

 

 

এখানেই শেষ নয়। সামনে ছিল আরও ভয়াবহ সহিংসতা। নতুন এক নিুবর্গ আফ্রিকান-আমেরিকানদের আগমন ঘটলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তারা দক্ষিণ-মধ্য লস অ্যাঞ্জেলেসে নোংরা আবাসনে গাদাগাদি করে বসবাস শুরু করে। গবেষক রবার্ট ফোগেলসন লিখেছেন, রিয়েল এস্টেট বাজার এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল, যাতে কৃষ্ণাঙ্গদের মূল আবাসন বাজার থেকে বাদ দেওয়া যায়। ফলে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য, তাদের গেটোগুলো ছিল অবরুদ্ধতা ও অধীনস্থতার প্রতীক। এ চাপা বারুদের স্তূপে আগুন লাগতে দেরি হয়নি। ১৯৬৫ সালের আগস্টে, ওয়াটস পাড়ায় এক শ্বেতাঙ্গ হাইওয়ে পুলিশ অফিসার এক তরুণ কৃষ্ণাঙ্গকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করেন। তার মা প্রতিবাদ করতে গেলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। বড় একটি জনতা জমা হয় এবং তারা পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। ওয়াটস দাঙ্গায় ১৫ জন নিহত হন, আহত হন ১,০০০-এর বেশি, এবং ৪,০০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসলে ঘটনাটি ছিল নিুবিত্ত কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের একটি বৃহৎ পরিসরের, প্রতিনিধিত্বমূলক সম্মিলিত প্রতিরোধ। তাদের হতাশার মূল কারণ ছিল নিয়মিত পুলিশি বর্বরতা, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত সুযোগের ঘাটতি ও প্রান্তিকীকরণ।

 

 

সবচেয়ে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা ঘটেছিল ১৯৯২ সালে, যখন চার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে কৃষ্ণাঙ্গ মোটরচালক রডনি কিংকে হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর ফলে ছয় দিনব্যাপী তীব্র সহিংসতা হয়। এ দাঙ্গার প্রেক্ষাপটও গড়ে উঠেছিল কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের সহিংসতার পটভূমিতে। উল্লেখ্য, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ ৬৫ জন আফ্রিকান-আমেরিকানকে গুলি করে হত্যা করেছিল। কিন্তু মাত্র একটি ঘটনায় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই অসংখ্য প্রতিবাদ, আন্দোলন, বিক্ষোভ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়। তবে, শ্বেতাঙ্গ শাসকদের কাছে কালোদের এসব আন্দোলন উপেক্ষিত হয়েছিল।

 

 

এবারও দক্ষিণ-মধ্য লস অ্যাঞ্জেলেসের দাঙ্গাগুলোতে শুধু কৃষ্ণাঙ্গরাই নয়, হিস্পানিক এবং কিছু শ্বেতাঙ্গ অংশ নিয়েছিল। তবে, এশীয় মালিকানাধীন দোকানপাট ব্যাপকভাবে লুটপাটের শিকার হলেও আশ্চর্যজনকভাবে কোরিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে কোনো জাতিগত সহিংসতা ঘটেনি। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র সহিংসতার সময়েও সম্প্রীতি বজায় ছিল। ইতিহাসবিদ কিং-কক চিউং লেখেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ শহরের ধনী এলাকাগুলো রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকায় অভিবাসী আফ্রিকান-এশিয়ানরা নিজেদের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করতে বাধ্য হয় ও সম্প্রীতি গড়ে তোলে।

 

সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, বৈচিত্র্যময়তার মধ্যে ঐক্য, ভারসাম্য ও প্রীতির বন্ধন বজায় রাখা সব সমাজের জন্যই কঠিন। কাজটি আরও বেশি কঠিন হয়, যখন সমাজটি অর্থনৈতিক বৈষম্য, জাতিগত হিংসা, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসে বিভাজিত ও বিভক্ত থাকে। রাষ্ট্র ও সরকার যদি এ বিভেদকে উসকানি দেয়, তাহলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হতে বাধ্য হয়। যেমন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত ভাষায় কথা বলেছেন। মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্য বক্তৃতায় বলছেন, তারা গৃহপালিত প্রাণী খাচ্ছে; মেক্সিকান অবৈধ অভিবাসীরা ধর্ষক! এমন ঘৃণ্য বক্তব্য সামাজিক, সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সম্প্রীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সম্প্রদায়কে তিনি অপমান করেছেন, সেগুলোই দেশটির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। অন্য সব আমেরিকান সম্প্রদায়ের মতো, তাদের মধ্যেও সামান্য কিছু অপরাধী আছে বটে, কিন্তু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই গর্বিত শ্রমিক, যারা সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চায় এবং একইসঙ্গে তাদের সংস্কার ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চায়, যেটিকে তারা গর্বের সঙ্গে ধারণ করে আমেরিকার মূলস্রোতের অংশ মনে করে। নতুন প্রশাসন সে অধিকার ক্ষুণ্ন করায় সংগত কারণের জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আর এ কারণেই লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসী বিক্ষোভকারীরা তাদের মাতৃভূমির পতাকা উড়িয়েছেন। তারা একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তাদের এ ঐতিহ্যগত পরিচয়টিও আমেরিকার সংস্কৃতিরই অংশ, যেমন ইতালীয় রেস্টুরেন্ট থেকে নিয়মিত ইতালির পতাকা ওড়ে কিংবা বোস্টনের শোভাযাত্রায় দেখা যায় আইরিশ পতাকা।

 

 

যদিও ট্রাম্পের উসকানিমূলক রাজনৈতিক অভিপ্রায় একটি সংকট সৃষ্টি করেছে, তবুও ধরে নেওয়া ভুল হবে যে, এ উত্তেজনা আমেরিকাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, আমেরিকায় প্রতি ছয়টি নবদম্পতির মধ্যে একজন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর, যা এমন একটি দেশে বিশাল পরিবর্তন, যেখানে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত আন্তঃজাতিগত বিবাহকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তারপরও সংস্কৃতিগত সহাবস্থান বৃহত্তর আমেরিকানরা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যবাদী বিদ্বেষ আমেরিকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত ঐক্য ও সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। অথচ ট্রাম্পের উত্থানে হিস্পানিকদের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। আর এখন জনমত জরিপ বলছে, ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন ইতোমধ্যে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসার কারণে জাতিগত হিংসা ও দাঙ্গার ইতিহাস আবার ফিরে আসছে, যার প্রকাশ দেখা গেছে লস অ্যাঞ্জেলসে, জুন ২০২৫ সালে।

 

 


প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়