কল করুন

কৃতিকথন

কনফিডেন্সই আমার কনফিডেন্স বাড়িয়েছে

ভাইয়ের মায়ের এমন স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ,
ওমা চরণ দুটি বক্ষে ধরি, আমার এই দেশেতে
জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি॥

কয়েক দিন আগেই আমি আমার বন্ধুর সাথে এই গানটি গাচ্ছিলাম। আমি গানটি গাওয়ার পরপরই আমার বন্ধু বলে, তুই তো থাকবি দেশের বাইরে। তুই এই গান গাচ্ছিস কেন? তার প্রশ্নের উত্তরে আমি কী বলেছিলাম সেটা আমার বক্তব্যের শেষ অংশে দেবো।

পাউলো সোহেল তার এই আলকেমিস্ট বইতে বলেন,  তুমি যখন নিজ থেকে কিছু পাওয়ার ইচ্ছে করো, তখন পৃথিবীর সমস্ত কিছুই তোমাকে এমনভাবে সাহায্য করবে যেন জিনিসটা তুমি পেয়ে যাও। আজকে আমি কিছু গল্প এখানে শেয়ার করতে চাই। যে গল্প আগে আমি কখনো কোথাও বলিনি। কিন্তু আমি চিন্তা করলাম আজকে ছোট করে বলবো এই কাহিনি।


অলরেডি আমি মনে হয় ১০ নাম্বার মানুষ যে এখানে বক্তব্য দিচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেকেই বিরক্ত হয়েগিয়েছেন ,তারপরেও ছোট করে শেয়ার করবো আরকি।
প্রথমে আমি একটু কনফিডেন্সের কথা বলি, কনফিডেন্সকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার এই পথ যাত্রায় সাহায্য করার জন্য। কেনোনা আমি প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইভা প্রত্যেকটা পরীক্ষার জন্য অনেক সাহায্য পেয়েছি কনফিডেন্স থেকে। আমি অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছি কনফিডেন্স থেকে।

আমাকে যখন কোনো জুনিয়র জিজ্ঞেস করে ভাই কনফিডেন্স কোচিংটা কেমন ? তখন আমি বলি, কনফিডেন্স কোচিং কনফিডেন্স বাড়ায়। এটা আমি সব সময় বলতাম। কেনোনা আমি যখন রিটেন পরীক্ষা দিতাম কনফিডেন্সে তখন আমার কনফিডেন্স বাড়ানোর ক্ষত্রে এই কোচিং অনেক ভূমিকা রেখেছিলো। যেহেতু বক্তব্যটি রেকর্ড থাকবে, ভবিৎষতে যারা আমার কথা শুনবে, তাদের উদেশে বলতে চাই , প্রিলিমিনারির ক্ষেত্রে আমি যে কাজটা করেছিলাম আমি আমার সিলেবাসটা ভালো করে আয়ত্ত আনার চেষ্টা করেছিলাম। প্রিভিউস ইয়ার প্রশ্নগুলো সল্ভ করেছিলাম। বেশি বেশি করে অনুশীলন করে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। 

আর রিটেনের ক্ষেত্রে যদি কিছু বলতে চাই, সেক্ষেত্রে আমি বলবো, চেষ্টা করছি কোয়ালিটি লেখা কীভাবে লেখা যায়। আমি সবসময় মানসম্পন্ন লেখার প্রতি জোর দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং বাংলাদেশ বিষয়াবলি এই দুইটা বিষয়ে চেষ্টা করতাম লজিক্যাল লেখার জন্য। আর বাংলা ইংরেজির ক্ষেত্রে চেষ্টা করতাম ভাষাগত দক্ষতা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেভাবে লেখার জন্য। সবসময় চেষ্টা করতাম আমার খাতাটি স্যারের  কাছে পৌঁছাবে। আমি স্যারের পৌছাবো না। সুতরাং স্যারকে কীভাবে ইমোশনালি এটাচ করা যায় সেটা করার চেষ্টা করতাম। সে জন্য আমি সুন্দর প্রেজেন্টেশন করার ট্রাই করতাম। যে স্যার খাতা দেখেন যেন ইমপ্রেসড হয়ে যান। 

তো আমার জীবনের গল্প সেটা হয়তো অনেকেই জানেন ইতিমধ্যে, আমি যখন আমার রিটেনের পরীক্ষা শুরু করি, সেদিন রাতেই আমার বাবা হার্ট ফেইল করে। তো আব্বাকে আমি আইসিউতে রেখেই আমি আমার বাকি পরীক্ষা গুলো সম্পন্ন করেছিলাম। আমার মেন্টাল অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।  ইভেন আমি যখন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাই, আমি ইভেন জানতাম না যে আমি যেতে পারবো কি না পরীক্ষা হলে। আমার শরীর এতো খারাপ লাগতেছিলো সেদিন। আমি বার বার দোয়া করতেছিলাম আল্লাহর কাছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ করুণা ছিলো। প্রত্যেকটা মানুষের দোয়া ছিলো। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার তিন ঘন্টা আমি ভালো ইউটিলাইজড করতে পেরেছি।

বাবা আমাদের মাঝে ফিরে আসছিলেন যখন আমার টেকনিক্যাল পরীক্ষা দেই। তো এটা আমার লাইফের আসলে বড় একটা পরীক্ষা। আমি মনে করি আমার লাইফে পরীক্ষা দেয়ার আর কিছু নাই। বাবাকে আইসিউতে রেখে টানা ২১ ঘন্টা পরীক্ষা দেয়া এবং টেকনিক্যাল পরীক্ষা দেয়া এর চেয়ে বেশি কষ্টের আসলে কিছু নেই। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি আমার লাইফের বাস্তবতা আসলে অন্যভাবে দেখছি। এটা আসলে খুবই ডিফিকাল্ট ছিলো। আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো, আমি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরদিন একটা জব লেটার পেয়েছিলাম। বাট আমি জবে জয়েন করিনি। আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, বাবা তোমার এখন জবে জয়েন করার দরকার নেই। আমি তো আছি।


তুমি যদি এখন জবটা করো তোমার হাতে কাঁচা টাকা আসবে। আর কাঁচা টাকা আসলে তুমি ফোকাসটা নষ্ট করে ফেলবে। সো তুমি জবে জয়েন না করে পড়াশোনায় ফোকাস করো। আমি বাবার কথা শুনে জবটাতে জয়েন করিনি। আমার আরও একটা ট্রাজেডি আছে। আমি সবসময় ছোটো বেলা থেকে আব্বা আম্মার সম্মানের কথা চিন্তা করতাম। একটা মেয়েকে আমার অনেক ভালো লাগতো। আমি আমার আব্বাকে একদিন বলছিলাম যে, আব্বা আমার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে এখন কী করা যায়? 

আব্বা বললেন, তুমি আগে পড়াশোনাটা শেষ করো। তারপর আমি দেখবো কী করা যায়। তো এই মুহূর্তে ওই মেয়ের যে ফ্যামিলি ছিলো ওনারা ওই মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলে। তো আমি হচ্ছে ওই মেয়ের বাবাকে ফোন দেই। বলেছিলাম, আংকেল আমার তো সামনে পরীক্ষা আছে। আমি তো মাত্র বের হলাম পাস করে। আমাকে কিছুদিন সময় দেন। আমি পরীক্ষাটা শেষ করি। তারপর কিছু করেন। কিন্তু ওরা আমার শুনলো না। ওর বিয়ে ঠিক করে বিয়ে দিয়ে দিলো। তখন আমি একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্যে ছিলাম বেশ খারাপ অবস্থা ছিলো। তো তখন আমি নিজেকে পড়াশোনার মধ্যে ফোকাস করেছিলাম। 


তো যেদিন আমার ফলাফল দেয়, সেদিন আমার এক ভাই আমাকে নক করে বলে কী অবস্থা সামদানি, রেজাল্ট কী বলো? আমি বললাম এই ফরেন ক্যাডার। বলে ফার্স্ট হয়েছিস? আমি বললাম না ভাই, চতুর্দশ স্থান। নার্ভাসনেসের কারণে আমি খেয়ালই করিনি আমার রেজাল্ট ছিলো ত্রয়োদশ। এই যে মন থেকে বিশ্বাসটা- সে বিশ্বাসটা আমার আগেই ছিলো যে, আমার দ্বারা সম্ভব। আমি পারবো। এখানে রায়হান ভাই উপস্থিত আছেন যিনি প্রশাসন ক্যাডারে থার্ড। ভাই আমাকে বলতো, তুই কিন্তু সুশান্ত ভাইয়ের রেকর্ডটা ভাঙ্গতে পারবি ইনশাল্লাহ্।

আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। আজকে কনফিডেন্সে কতৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান অতিথিসহ সভাপতি আমি সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাছাড়া আমার সামনে যারা বসে আছেন, আমার সহকর্মীবৃন্দ তাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করার চেষ্টা করতে হবে। আর সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে। তাহলে আমরা সবাই সফলতার কাতারে সমবেত হতে পারবো। আমি আমার বক্তব্যটি শেষ করবো কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন দিয়ে-

তোরা সব জয়ধ্বনি কর তোরা সব জয়ধ্বনি কর
ঐ নতুনের কেতর ওরে কালবৈশাখী ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর॥

গোলাম সামদানি

ফরেন ক্যাডার

৪৩তম বিসিএস